আজব রোগ স্লিপ ওয়াকিং!
অনেকেই ঘুমের মাঝে কথা বলেন। কেউ কেউ আবার ঘুমের মাঝে উঠে বসে পড়ে। আবার অনেকেইতো ঘুমের মাঝে হাঁটে! যারা বাস্তব জীবনে কাউকে ঘুমের মাঝে হাঁটতে দেখেননি তারা সিনেমায় অবশ্যই দেখেছেন। ঘুমের মাঝে হাঁটা বা স্লিপ ওয়াকিং নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
ঘুমের মাঝে যারা হাঁটে বা কথা বলে তারা নিজেরাও জানেনা আসলে তারা কি করেছে। কিন্তু তার সাথে থাকা যেকেউ বুঝতে পারে সে আসলে কি করছে। এমনকি ঘুমের মাঝে হাঁটা লোকটিকে জাগিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললেও সে বিশ্বাস করেনা। অদ্ভুদ এই রোগটাকে বলা হয় স্লিপ ওয়াকিং। ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় সোমনমবুলিজম বা নকচামবুলিজম।
স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমের মাঝে ঘটা আজব কিছু ঘটনাঃ
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী মাইকেল হুয়ায়েল তার অভিজ্ঞতা থেকে জানান। “একদিন আমি দেখলাম এক লোক বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে উঠছে। অতচ সে ঘুমের মাঝে ছিল। এবং গাড়ি স্টার্ট করে চালানো শুরু করে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাঁধা দেয়ার আগেই তিনি গাড়িটিকে একটা গাছের সাথে লাগিয়ে প্রচন্ড ধাক্কা খান। এবং তখন তার হুশ ফিরলে বুঝতে পারে তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিল। পরে জানলাম ওই ব্যাক্তি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল বলেই এমনটা ঘটেছে।
পেনিসেলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট ফিলিপ গেরহাম তার ছাত্রদের বলেন, ‘আমি একজন মহিলাকে চিনি যে কিনা ঘুমের মধ্যে নিয়মিত খাবার খায়। এমনকি তিনি রান্নাঘরে গিয়ে আপেল মনে করে কাঁচা পেয়াজ চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। সকালে ঘুম থেকে জেগে মুখে পিয়াজের গন্ধ পেলেও কেন এমন হলো তা তিনি বুঝতে পারতেন না। কোউতুহল্বশ্ত একদিন রান্নাঘরের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে উনার চখ কপালে উঠে গিয়েছিল। যারপর তিনি আমার কাছে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য।
ঘুমের মাঝে যারা খবার খায় তারা কখনও ভালো কিছু খায় না। ঘুমের মাঝে অনেকে কেউ কেউ সিগারেটের সাথে বাটার মেখেও খেয়ে ফেলেছেন।
মাইকেল হুয়ায়েল আরও জানায়, ঘুমের মাঝে কারো কারো স্লিপ প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে। এতে করে ওই লোক ঘুমন্ত অবস্থায় ঘটাতে পারেন মারাত্মক সব ঘটনা। মেরে বসতে পারেন পাশে থাকা কাউকে কিংবা নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন।
তিনি জানান, তার এক রোগী রাগবি বল মনে করে নিজের স্ত্রীর মাথা চেপে ধরতেন প্রতি রাতেই। আবার আরেকজন আছে যিনি নিজেকে স্পাইডারম্যান মনে করে প্রতিরাতেই জানালা দিয়ে বাইরে লাফ দিতেন। সাধারণত বয়স্ক মানুষই এসব রোগে ভোগে থাকেন।
কারা এই রোগে বেশি ভোগে?
১)বড়দের থেকে ছোটদের মাঝে দেখা দেয় এটি বেশি। কিশোরদের মাঝে ও এটার কিছুটা প্রবনতা দেখা যায়।
২)মাথায় কোন আঘাত পেলে হতে পারে।
৩)বংশে বাবা-মা এর থাকলে সন্তানের হতে পারে।
৪) ওএসএ নামক চোখের রোগ যদি কারো থেকে থাকে তাদের হতে পারে।
কেন এই রোগ হয়?
১। ঠিকমত ঘুম না হলে ও এমন হতে পারে।
২।কেউ যদি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তার এমন হতে পারে।
৩।কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৪। ঘুমের সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে কোন কষ্ট হলে হঠাত করে এমন হতে পারে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১। আপনি যদি বুঝে থাকেন আপনার পাশের মানুষটি স্লিপওয়াকিং করছে তবে তাকে কোন ধরনের বিরক্ত করবেন না, সে যা করতে চায় তাকে তা করতে দিবেন।
২। এদের একা ঘুমাতে দিবেন না কারন একা থাকলে এরা নিজের অজান্তেই হাটতে হাটতে বের হয়ে যেতে পারে বাসা থেকে।
৩। বুঝিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
৪। এই ধরনের ব্যক্তির আশে পাশে যেন কোন ধারলো যন্ত্রপাতি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বার্তাবাজার/এসজে