নিখোঁজ স্কুল ছাত্রীর উদ্ধারের ৬দিন পর আত্মহত্যা।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় নিখোঁজ স্কুল ছাত্রী উদ্ধারের ৬ দিন পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের গোয়ালখালী গ্রামের প্রবাসী গোপার মন্ডলের মেয়ে সেতু মন্ডল (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সে ঢাকা নবাবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর কবি নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের শিকার হয়েই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১০ এপ্রিলে স্কুলে যাওযার জন্য বাসা থেকে বের হলে নিখোঁজ হয় সেতু মন্ডল। ১১ এপ্রিলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার গোলাম বাজার পুলিশ ক্যাম্পের এলাকায় স্থানীয়রা সেতুকে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় দেখে ক্যাম্প পুলিশকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে বাড়ীতে খবর দেওয়া হয়। সেতু মন্ডলের আত্মীয় স্বজনরা স্কুল তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন। উদ্ধারের সময় সেতুকে তদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় পাওযা যায়। উদ্ধারের পর উপজেলার শেখরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সেতুকে জিজ্ঞাসাবাদে সে কিছুই বলতে পারেনি। বাড়ীতে আসার পর সেতু মন্ডল ৪-৫ দিন ঘুমে বিভোর থাকে। ১৭ এপ্রিল বুধবার সকাল ৯টায় সেতুর মা তাকে খাবারের জন্য বললে সেতু খাবার খেতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে তার মা বাহিরে পানি আনতে গেলে তার ঘরের আড়ার সাথে উরনা পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে সেতু মন্ডলকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ ফরিদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মারা যাওয়ার পর পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ সেতুকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। তিনি জানান, সন্ধেহ ভাজন দুই জনকে জিজ্ঞাসা করার জন্য আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

সেতু মন্ডলের নিকট আত্মীয় আলী আজগর আব্দুল্লাহ কলেজের সহকারী গোবিন চাঁন মন্ডল বলেন, উদ্ধারের সময় মেয়েটি স্বাভাবিক ছিল না। জোর করে নেশা করনো হয়েছিল ধারনা করা হয়। উদ্ধারের পর থেকে বেশীর ভাগ সময়ই ঘুমে থাকতো। তাঁর মায়ের বরাদ দিয়ে জানান, সেতু মন্ডলকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থা থেকেও তা স্পষ্ট হয়।

সেতু মন্ডলের মা জানান, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সেতু তাকে সোহেল নামের এক যুবক তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আর তেমন কিছু বলেননি। পর দিন তাকে একটি স্থানে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশের ধারনা মেয়েটি ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিল এবং কোন নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। মেয়েটি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থার পরই আত্মহনণের পথ বেছে নেয়।

ওসি সেতু মন্ডলের মা রেখা মন্ডলের বরাদ দিয়ে বলেন, মান সম্মানের ভয়ে মুখ খুলেননি। হাসপাতালে পর্যন্ত নেননি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় সেতুকে। ওসি জানান. জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেল মিয়া (২৪) আটক করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোহেল মিয়া (২৪) ছাড়াও পলাশ রাজবংশী (২৩) নামে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই দুইজনকে আটক করা হয়। স্কুল ছাত্রী সেতু মন্ডলের বিষয়ে ওই দুই যুবক সম্পৃক্ত কিনা তা তদন্ত চলছে। তাছাড়া স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে কি হয়েছিল-তা উদঘাটনের লক্ষ্যে ওই দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার গোলামবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কবিরুল ইসলাম জানান, ১১ এপ্রিল গোলামবাজার এলাকায় থেকে ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে সেতু মন্ডলের আত্মহননের খবরে গ্রামটিতে শোকের ছায় নেমে এসছে। তার নিজ বিদ্যালয়ে শোক এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সেতু মন্ডলের আত্মহত্যা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে শনিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে।

এই ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় চক্রবর্তী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, গোলামবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সেতুমন্ডলের পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। অথচ কিভাবে এখানে এল। কারা অপহরণ করল এব্যাপারে এই পুলিশ ফাঁড়ি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিনি জানান, সেতু মন্ডলকে অপরণের করে ধর্ষণের পর আত্মহননের পথ বেছে নেয়। জীবন দিয়ে সেতু মন্ডল এই ঘৃন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েগেছে।

সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূল শাস্তি দাবী করেছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর