ক্ষমা চাইলেন শোভন-রাব্বানী

রোববারের মধ্যে (২১ এপ্রিল) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে। এর মধ্যে সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কমিটি জমা দেয়া হবে। পাশাপাশি রাজধানীর তিন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে ৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে  এসব তথ্য জানান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

এর আগে গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের ২ দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন হয় ২৯ এপ্রিল।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন হয় যথাক্রমে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই দিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও অনুমোদন করেন। এর আগে ৫ এপ্রিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং রাজধানীর তিন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। গঠনতন্ত্রে জেলা ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর। সম্মেলনের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার দুই মহানগরের সম্মেলনের পর থেকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এ তিন শাখার কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

এর মধ্যে অন্তত ১০ দফায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েও তা গঠন করতে পারেননি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কমিটি গঠনে নতুন সময়ের কথা জানাল ছাত্রলীগ। ২১ এপ্রিল কমিটি প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে সাক্ষাৎকালে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান। আগামীতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

এ বছরই সম্মিলিতভাবে ফের বৈশাখী কনসার্ট আয়োজনেরও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ভূমিকায় থেকে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ডাকসুর সঙ্গে সমন্ব^য় করে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। যুগান্তরকে এসব বিষয় জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জানান, সাড়ে ৮টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান তারা। ১ ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য কাজ করতে বলেন। ডাকসুকে কার্যকর করতে ছাত্রলীগের সঙ্গে সমন্বয় করে তা পরিচালনা করতে বলেন। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করতে বলেন। এক্ষেত্রে প্রার্র্থী হিসেবে জনপ্রিয়, কর্মীবান্ধব, ত্যাগী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘২১ তারিখের মধ্যে কমিটি প্রস্তুত করে আমরা আপার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে জমা দেব। সেদিনই কমিটি ঘোষণা হবে, যদি আপা অনুমোদন করেন।’ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান রাব্বানী। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া দিতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’

এর আগে, সময়ক্ষেপণ বন্ধ করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আলটিমেটাম দেয় আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় নির্ধারিত সময়ে কমিটি দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা ও ক্ষুব্ধ মনোভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে ৪৮ ঘণ্টার কঠোর নির্দেশনার পাশাপাশি দু-এক দিনের মধ্যেও শব্দটি কঠোরভাবে ব্যবহার করেছেন কয়েকজন নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান  বলেন, তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়েছে। আমরা দু-এক দিন সময় বেঁধে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা জানিয়ে দিয়েছি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর