আগামী ২৭ এপ্রিল অবসরে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ মোয়াজ্জম হোসেন

জ্ঞান অর্জনকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। আর নবীর ভাষায় জ্ঞান বিস্তারকারী পৃথিবীর সেরা মানুষ। সে হিসেবে শিক্ষকরাই দেশের সেরা মানুষ। তবে সেরাদেরও সেরা থাকে। তারই উদাহরণ হচ্ছে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ।

শিক্ষা যার ধ্যানজ্ঞান। দেশের মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণাসহ সামগ্রিক শিক্ষকতা পেশার উন্নয়ন, মর্যাদা বৃদ্ধি ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে তার অবদান অবিস্মরণীয়। বহু সংগ্রাম করে আজ তিনি সফল জীবনের এক প্রতিকৃতি। সহজ সরল এমন একজন মানুষ আজ পরিণত হয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও কলেজে সার্বিক বিষয় খোঁজ খবর নিতে গেলে তাঁর সহকর্মীরা ছিলেন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৭ এপ্রিল তিনি অবসর নেবেন। কলেজ প্রশাসন অধ্যক্ষের বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করবে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিদায় জানানো হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তরুণ শিক্ষকদের জন্য তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই কলেজ সব সময়ই তাঁর অভাব অনুভব করবে।

অর্থাৎ আগামী ২৭ এপ্রিল এই গুনী মানুষকে হারাতে যাচ্ছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে সমাপ্ত হবে একজন গুনী শিক্ষকের শিক্ষা বিস্তারের আনুষ্ঠানিকতা। তবে শিক্ষা বিস্তারের আনুষ্ঠানিক ইতি টানলেও জীবনের শেষ পর্যন্ত শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের ইতিহাসে সেরা অধ্যক্ষদের মধ্যে অন্যতম মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ। তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে কোন শেষ নেই। জীবনের শেষ পর্যন্ত দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাবো।

ঢাকা কলেজ কাজ করতে পেরে গর্বিত জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ৪ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্বিত। সবার সহযোগিতায় এই পর্যায়ে পৌঁছেছে ঢাকা কলেজ। অধ্যক্ষ হওয়ার পর যে কাজ হাতে নিয়েছিলাম তার এক চতুর্থতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি কাজ সময়ের অভাবে করতে করা যায়নি। আশা করি আমরা রেখে যাওয়া কাজ নতুন অধ্যক্ষ এসে শেষ করবে।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জীবনের জন্য লক্ষ্য বা টার্গেট থাকতে হবে। কারো ক্ষতি করা নয়, বরং ভালোকিছু করার প্রবণতা থাকতে হবে। মানুষের জীবনে কিছু করে যাওয়ার মতো সময় খুব অল্পই পাওয়া যায়। এই সংক্ষিপ্ত জীবনের পরিভ্রমণে ভালো কিছু অর্জন করে তা মানুষের মাঝেই বিতরণ করে যেতে হবে।

অভিবাবক হারানোর বেদনা অনেক। তবে পৃথিবীর চিরায়িত নিয়ম মেনে নতুন অধ্যক্ষের অপেক্ষায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সম্পর্কে গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা কলেজের সেরা অধ্যক্ষের মধ্যে মোয়াজ্জম হোসেন স্যার একজন। তাকে হারাতে হবে এটা অত্যন্ত বেদনার। তবে এটা মেনে নিতে হবে। আমরা চাইবো তার মতো আরেকজন আধুনিক শিক্ষাবান্ধব শিক্ষককে আমরা অধ্যক্ষ হিসেব পাবো।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, মোয়াজ্জম স্যারের মতো আরেকজন অধ্যক্ষ পাওয়া কঠিন। তবে আমরা আশাহত নয়।

২০১৬ সালে ২৭ মার্চ ঢাকা কলেজে ৭০তম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ। এর আগে তিনি সাবেক উপাধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই কৌতুহলী, সৃষ্টিশীল, কল্পনা বিলাসী। মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জামাল উদ্দিন মোল্লা এবং নুরজাহান বেগমের ৫ম সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকে জ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর অকুন্ঠ তৃষ্ণা।

১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করার পর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে (৭তম) উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরিজীবন শুরু করেন। অধ্যক্ষ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন একই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের ছাত্র, একজন শিক্ষক, দুইবার নির্বাচিত টিচার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং সর্বশেষ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ পদ লাভ করার গৌরব অর্জন করেন।

দায়িত্ব পালন করার পর থেকে তিনি, আধুনিক এবং মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রদের শারীরিক উৎকর্ষ এবং মানসিক বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি, তার সমগ্র জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় গর্বিত প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর