ছেলে বিদেশে, পুড়িয়ে মারার হুমকি পুত্রবধূকে

সাড়ে চার লাখ টাকার আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে নিয়েছেলেন ছেলের বিয়ের সময়।বিয়ের দুই মাস পার না হতেই শ্বশুর বাড়ির চার লাখ ২০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন বর।

সেখানে পছন্দ মতো কাজ না পাওয়ায় ব্যবসা করার অজুহাতে মেয়ের বাবার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে ছেলের পরিবার। সেই টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে বেদম মারধর করে ছেলের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। দাবি করা ওই টাকা না নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ঢুকলে ওই গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মেয়ের বাবা থানায় অভিযোগ দিলে শেষমেশ বিয়ের কথাই অস্বীকার করছে প্রবাসী ছেলে কামরুল ইসলামের পরিবার। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম পাংশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

মামলার অভিযোগ, পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম পাংশা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে কামরুল ইসলামের সঙ্গে একই গ্রামের কবির হোসেন হাওলাদারের মেয়ে মরিয়ম আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ওই প্রেমের সূত্র ধরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে প্রথমে বরিশালের নোটারি পাবলিকের আদালতে এবং পরদিন ১৫ মে বরিশালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাজী অফিসে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়।

এরপর মরিয়মকে ঘরে তুলে নেওয়ার সময় পাত্রপক্ষের চাহিদা মোতাবেক সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে গৃহসজ্জার যাবতীয় আববাবপত্র বানিয়ে দেন মেয়ের বাবা কবির হোসেন হাওলাদার। এদিকে ছেলে বেকার থাকায় তাকে বিদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা করে কামরুলের পরিবার।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসাসহ যাবতীয় খরচ মেয়ের বাবার কাছে দাবি করেন তারা। মেয়ের সুখের জন্য নিজের জমি বিক্রি করে জামাইকে বিদেশ পাঠান কবির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ২২ জুলাই কামরুলকে মোট ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া পাঠাই। বিদেশে যাওয়ার পর থেকেই সেখানে পছন্দ মতো কাজ না পাওয়ার অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিতেন কামরুলের পরিবার।

বিদেশে বেকার জামাইয়ের থাকা-খাওয়ার খরচ, শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের খরচ ইত্যাদি বাহানায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করে কামরুলের বাবা হারুন, মামা বশির হাওলাদার ও বড়ভাই মেহেদি হাসান।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার বাহানায় কামরুলের জন্য আরও নগদ ১০ লাখ টাকা চান তারা। ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার মেয়ে মরিয়মকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে ওইদিনই বাড়ি থেকে বের করে দেন। দাবিকৃত ওই টাকা না এনে বাড়িতে উঠলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন কামরুলের বাবা ও বড়ভাই।’

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল মহানগরের এয়ারপোর্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইদ্রিস হোসেন বলেন, ‘কবির হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে তার জামাতা কামরুলের বাড়িতে গেলে প্রথমে বিয়ের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে আসামি পক্ষ।

পরে তাদের বাড়িতে যৌতুক নেওয়া নতুন ফার্নিচার দেখে জিজ্ঞেস করা হলে মালামাল নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিয়ের কাবিননামা এবং হলফনামার কথা অস্বীকার করেন তারা এবং পরদিন ওই বিয়ের সময় নেওয়া বিভিন্ন ফার্নিচার তারা মেয়ের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেন।’

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ বিন আলম বলেন, ‘ঘটনাটি পারিবারিক ও প্রবাসী ছেলের পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগ আসায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের সম্মতিতে সোমবার বিকেলে সালিশের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

তবে ছেলেপক্ষরা সেখানে উপস্থিত না হওয়ায় ওই সুরাহা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাতেই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখন বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিয়ের কাবিননামায় ছেলেপক্ষের উকিল স্বাক্ষী ছেলের চাচা ফিরোজ তালুকদারের কাছে বিয়ের বিষয়ে জানতে গেলে তিনি বলেন, ‘উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৮ সালের ১৫ মে বরিশালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাজী অফিসে বসে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।

সেখানে ছেলের মা-বাবা ও ভাইসহ আমাদের পরিবারের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পরে নবদম্পতি ছেলের বাড়িতে প্রায় ২ মাস ঘর-সংসারও করেছে। বিয়েতে ঘর সাজানোর যাবতীয় ফার্নিচারসহ বিদেশ যাবার খরচের টাকাও মেয়ের বাবা দিয়েছেন বলে শুনেছি।

এরপরেও ছেলের পরিবার এখন কীভাবে সেই বিয়েটাকেই অস্বীকার করে তা আমার বোধগম্য নয়।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে কামরুলের বাবা অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য হারুন অর রশিদকে ফোন করা হলে তিনি কর্মস্থলে রয়েছেন এবং পুত্রবধূ মরিয়মকে চেনেন না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিয়ের কাবিননামার আরকে স্বাক্ষী কামরুলের মা মেহেরুন্নেসা ডিনা পুত্রবধূর কাছে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও বিয়ে এবং গৃহসজ্জার ফার্নিচার গ্রহণসহ তার ছেলের বিদেশ যাওয়ার সময় মেয়ের বাবা কবির হোসেন হাওলাদারের আর্থিক সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর