হাবিপ্রবির শিক্ষিকাকে গাড়ি চালকের অশ্লীল গালি, প্রতিবাদে মানববন্ধন

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) রিজেন্ট বোর্ড এর সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. ফাহিমা খানমকে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ” রিজেন্ট বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম। সেই রিজেন্ট বোর্ড এর একজন সম্মানিত সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. ফাহিমা খানমকে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ।

যেখানে বর্তমান সরকার কর্মক্ষেত্রে নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বয়োজেষ্ঠ্য নারী প্রফেসরকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করা কি পরিমাণ ধৃষ্টতার পরিচয় বহন করে আপনারা দেশবাসী ও দেশের পুরো নারীসমাজ তা নির্ধারন করবেন।

বক্তারা বলেন, অসুস্থ মানুষিকতার এসব মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও সমাজের শত্রু। গাড়ি চালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের এধরণের ধৃষ্টতা এটাই নতুন নয়। এর পূর্বেও ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে এই কর্মচারী শিক্ষক ফোরামের একটি সভায় পূর্বানুমতি ব্যতীত প্রবেশ করে প্রশাসনের সহায়তাকারী শিক্ষকদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লাঞ্চিত করেন।

এছাড়াও ঐ কর্মচারীর নেতৃত্বে ৩, ৪ জন উশৃঙ্খল কর্মচারী বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দকে কুরুচিপূর্ণভাবে ব্যঙ্গ করে থাকেন।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা দাবি জানায়, কয়েকদিন আগে আমরা জানতে পেরেছিলাম, গাড়ি চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এর নেতৃত্বে কর্মচারীরা প্রশাসনে সহায়তাকারী শিক্ষকদের শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাঞ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। যাতে আমরা সদা শঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রন্ত থাকি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর কোতয়ালি থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরিও করেন উক্ত শিক্ষকগণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সামনে পেলেই কটুক্তি করে গালিগালাজ করা তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তার এ ধরণের কর্মকান্ডের জন্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোশাররফ হোসেন মিঞাঁ ও প্রফেসর ড.এম. আফজাল হোসেন এর সময় ওই কর্মচারীকে ওএসডি করে রাখেন।

সদ্য সাবেক উপাচার্যের সময় সে অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ কয়েকটি ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করে। সম্প্রতি রিজেন্ট বোর্ড তা বাতিল করে দেয়। গাড়ি চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম যে একজন সন্ত্রাসী তার প্রমাণ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তারই সাবেক স্ত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিল।

নারী নির্যাতন, মারপিট, গালিগালাজ এসব কোন কিছুই তার জন্য নতুন ঘটনা নয়। একটি বিশেষ মহলের আস্কারা পেয়ে সে দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এমনকি এই সন্ত্রাসী হাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী তথা জোড়া খুনের মামলারও অন্যতম প্রধান আসামী।

এই সন্ত্রাসীর হাতে নারী, শিশু, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কেউই তার কাছে নিরাপদ নয়। আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেই নয়, আমরা বিচার চাই দেশের নারী সমাজসহ পুরো দেশবাসীর কাছে। আমরা বিচার চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. ফজলুল হক বলেন, ” স্বাধীনতার এতো বছর পর মুজিববর্ষে এসে তারই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নারী প্রফেসর এভাবে অপমানিত হবেন তা কল্পনা করাও কঠিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের পক্ষে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অন্যথায় আমরা আরো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব।”

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য প্রদান করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. তারিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ, কার্যকরী সদস্য, প্রফেসর ড. খালেদ হোসেন প্রমুখ।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর