প্রশ্নপত্র ফাঁস করা মুনাফিকের আলামত

ইসলামি কোনো সংস্থা বা কোনো আলেম অপরাধে জড়ালে তাকে ‘নিজেদের লোক’ অস্বীকার করে ভণ্ডামির অবতারণা ঠিক না, বরং নিজেদের লোক স্বীকার করে এবং সেটি মেনে নিয়ে তাকে দ্বিগুণ শাস্তির আওতায় এনে জাতিকে এ বার্তা দেয়া উচিত যে, আমরা আমাদের লোকদের ব্যাপারে তুলনামূলক বেশী কঠোর। সম্প্রতি রাষ্ট্র স্বীকৃত কওমি মাদরাসাগুলির দাওরায়ে হাদিস ও মিশকাত জামাতের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন, কওমি মাদরাসার ইতিহাসে এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নজিরবিহীন।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাত্রদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। সেই প্রশ্ন-ফাঁস করে দেয়া একটি ভয়ঙ্কর খিয়ানত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত ও তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৫৮)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। ২. মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচারকার্য পরিচালনা করতে। প্রথম নির্দেশটি সাধারণ মুসলমান থেকে শুরু করে দেশের দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, আমির-অমাত্য, রাজা-বাদশাহ পর্যন্ত সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। আর দ্বিতীয় নির্দেশটি যারা মানুষের বিচারকার্যে এবং প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের প্রতি আরোপিত।

সারকথা হলো, যার হাতে যে আমানত রয়েছে এবং যার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে তার কর্তব্য সেই আমানত ও দায়িত্বের প্রতি পূর্ণ যত্নশীল থাকা এবং হকদারকে তার প্রাপ্য হক ও আমানত যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানত প্রত্যর্পণের প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। হযরত আনাস রা. বলেন, এমন কমই হয়েছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বক্তৃতা করেছেন, অথচ আমানত প্রত্যর্পণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেননি। তিনি বলেছেন, যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার পূর্ণ ঈমান নেই, আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার প্রবণতা নেই তার মধ্যে পূর্ণ দ্বীন নেই। (মুসনাদে আহমদ : হাদীস ১২৫৬৮, ১৩১৯৯)

হযরত আবু হুরায়রা রা. ও ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে মুনাফেকের কয়েকটি পরিচয়ের মধ্যে একটি পরিচয় এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন তার কাছে কোনো আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬৮২, ২৭৪৯; সহীহ মুসলিম : হাদীস ৫৯) এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, যারা মুনাফেক প্রকৃতির লোক, তারা আমানত রক্ষা করার প্রতি যত্নশীল থাকে না। হকদারের প্রাপ্য হক তাকে প্রত্যর্পণ করে না। হয় নিজে আত্মসাৎ করে অথবা অযত্ন ও অপব্যবহারের মাধ্যমে তা নষ্ট করে।

সূরা নিসার যে আয়াতটির তরজমা এ লেখার শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে ‘আমানত’ শব্দটি বহুবচনরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, অন্যের কাছে অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রাখাই কেবল আমানত নয়, যাকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারে আমানত বলা এবং মনে করা হয়; বরং আমানতের আরও অনেক প্রকার রয়েছে। উক্ত আয়াতের শানে নুযুলের ঘটনায় কাবা শরীফের চাবি প্রত্যর্পণের যে প্রসঙ্গ বর্ণিত আছে তাও কোন গচ্ছিত অর্থ সম্পদের আমানত নয়, বরং এটি ছিল কাবা শরীফের খেদমতের দায়িত্ব সম্পাদনের ভার ন্যস্তকরণ। (মাআরিফুল কুরআন, ৫ম পারা, পৃ. ৯৭) সুতরাং এথেকে বুঝা যায় যে, উক্ত আয়াতে আমানত শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে আমাদেরকে সর্বপ্রকার আমানতের প্রতি যত্নশীল থাকতে, আমানত আদায় করতে, এবং হকদারকে তার হক প্রত্যর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর