জাবিতে কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না র‌্যাগিংয়ের প্রবণতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ঘটে চলেছে ম্যানার শিখানোর নামে নবীন শিক্ষার্থীদেরকে র‌্যাগিংয়ের মত শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন। প্রতিবছর র‌্যাগিংয়ের একাধিক ঘটনা ঘটে থাকলেও এ শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে মূলত ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া হুশিয়ারি থাকলেও মূলত বিচারহীনতা, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, দায়সারা বিচার, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ঝুলে থাকা সহ বিভিন্ন কারণে এই অপসংস্কৃতি দূর যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং বিরোধী কার্যক্রম ও প্রতিকারমূলক তৎপরতায় প্রশাসনের বৈষম্য ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণকে দায়ী করছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয় নবীন (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের। ক্লাস শুরুর পরের দিনই র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে নিয়ে গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের করার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।

ওই ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা কমিটির জরুরী সভায় অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিং হয়নি উল্লেখ করে লিখিত দিলেও অভিযুক্তদের সাজা মওকুফ হয়নি। তাদের মধ্য থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করে ক্লাস-পরীক্ষিায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা সহ হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। একই সাথে বিচারিক তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছিল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটায়। বিভাগের খেলা দেখতে ক্লাসের সকল নবীন শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকায় দেওয়া হয় শাস্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ডেকে নিয়ে রাত দশটা পর্যন্ত গালিগালাজ, কান ধরানো, মুরগী বানানো (বিশেষ ধরনের শাস্তি), জুতা পেটা করা সহ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এত রাত পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল নারী শিক্ষার্থীদেরকেও।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের র‌্যাগিংয়ের এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হারুনুর রশিদ, তানভীর হাসান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এনামুল হক তামীম, মওলানা ভাসানী হলের রাইসুল ইসলাম রাজু, তাওসিফ আব্দুল্লাহ, স্টিব সলগা রেমা, জাকির হোসেন জীবন, মাহবুবুর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া হলের সারা বিনতে সালাহ, প্রীতিলতা হলের সায়মা লিমা, ফাবিয়া বিনতে হক সহ ১২-১৩ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।

উক্ত ঘটনায় বিভাগের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলেও বক্তব্য তাদের। ঘটনায় ভূক্তভোগীরা মৌখিক অভিযোগ দিলেও এ পর্যন্ত কোন রকম ব্যবস্থা নেন নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং নির্যাতনের শিকার নবীন শিক্ষার্থীদের বিভাগে ডেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগের বিষয়ে জানা যায়।

এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. দিদার বলেন, ‘র‌্যাগিং বন্ধে প্রশাসনের বৈসম্যমূলক আচরণ, কোনো বিশেষ মহলকে বিচারের আওতায় না আনা এই অপসংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেয়ার মতোই। আমরা আশাকরি প্রশাসন নৈতিক জায়গা ঠিক রেখে সবার প্রতি সমান বিচার প্রদর্শন করবে।’

উক্ত র‌্যগিংয়ের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির নির্লিপ্ততা রয়েছে উল্লেখ করে পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সভাপতি তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, ‘এর আগে যে ঘটনায় সাত শিক্ষার্থী বহিস্কার হয়েছিল তার চেয়ে বেশি অপরাধ করেছে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্রীদের সহ তাদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। আমরা আশা করব প্রশাসন র‌্যাগিং বন্ধে সঠিক পদক্ষেপ নিবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে মিটিং এ বসব। মিটিং থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমীর হোসেন বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর