ইসলাম ধর্ম গ্রহন করা ১১ জন: ভারতীয় নাগরিক হওয়ায়, ফেরত পাঠানো হবে

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হকের ছেলে মনির হোসেন ওরফে শঙ্কর অধিকারীর শিশু স্ত্রীসহ একই পরিবারের ১১ জন হিন্দু ধর্মালম্বী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহন করে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে লক্ষ্মীপুরে এক মাহফিলে আজহারীসহ আরও কয়েকজন আলেমের হাতে ধর্মান্তরিত হন শঙ্কর অধিকারী নামের ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের ১১ সদস্য। পরে জানা যায়, শঙ্কর অধিকারী নামের ওই ব্যক্তি ছোটকালে হারিয়ে যায়। গত ২৪ জানুয়ারী উপজেলার পানপাড়া এলাকায় আয়োজিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে ইসলাম ধর্মগ্রহন করে তারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রচারক ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী ও মাওলানা আমীর হামযা, রামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এর আগে সকল ধরণের আইনী কার্যক্রম সম্পূর্ণ করে তাদের ধর্মান্তর করা হয় বলে জানান আয়োজকরা। কালেমা পড়ান মাওলানা আবু নসর আশরাফী নামে এক হুজুর। হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে ধর্মান্তরকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় ধুম্রজাল।

নও মুসলিম সবাই এর পূর্বে মুসলিম ছিল বলে ফেইসবুকসহ কয়েকটি অনলাইন মিডিয়া প্রচার করা হয়। বলা হয়েছে ইতিপূর্বে তারা মুসলিম ছিল এবং তাদের সন্তানরা কেউ কেউ মাদরাসাও লেখাপড়া করতো। তবে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ভারতের নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়েছেন প্রশাসন। তাদের কাছে ১২টি পাসপোর্ট ও ১২টি জন্মনিবন্ধন কার্ড উদ্ধার করা হয়। যার একটি রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ও বাকী ১১টি কেরানীগঞ্জ উপজেলার।

মনির হোসেন ওরফে শঙ্কর অধিকারীর মা সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ফাতেমা জানান, ৩৫ বছর আগে তার ছেলে মনির হোসেনের বয়স যখন ১২/১৪ বছর ছিল তখন ঢাকার টঙ্গী এলাকায় তার খালার (ফাতেমার বোন হালিমা) কাছে থাকতো। ওইসময় সে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো। বিশ্ব ইজতেমায় একদিন মুড়ি বিক্রির সময় মনির হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বহু বছর পর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ফাতেমার পরিবার জানতে পারে মনির হোসেন কলকাতায় থাকেন, এবং শঙ্কর অধিকারী নাম গ্রহণ করেছেন। এরপর কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন মনির এবং জানান তিনি ভারতে বিয়ে করেছেন তার সন্তানও আছে। তবে ২৪ জানুয়ারী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন বলে স্বীকার করেন মা ফাতেমা মেম্বার।

এ বিষয়ে ফাতেমা মেম্বারের ছেলে ও মনিরের ছোট ভাই জহির উদ্দিন জানান, মনিরের সন্ধান পাওয়া যায় ২০১৬ সালে। তখন তিনি একা বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং চেষ্টা করছিলেন কলকাতায় থাকা তার সন্তানসহ পরিবারকে নিয়ে একেবারে বাংলাদেশে চলে আসতে। জহির আরো বলেন, “আমরা তখন জানতে পারি সে হিন্দু হয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়ার পর ও বাড়ি ঘরের ঠিকানা কাউকে বলতে পারেনি। বাংলাদেশ থেকে কারো মাধ্যমে ভারতে চলে গিয়েছিল। প্রথমে কলকাতায় একটি বন্দীখানায় ছিলো। তারপর সেখান থেকে ছাড়া পেলেও দেশে আসতে পারেনি। কলকাতায় থাকতে গিয়ে লোকজনের কাছে হিন্দু পরিচয় দেয়। এরপর হিন্দু মেয়েক বিয়ে করে। তার ঘরে সন্তানও হয়। পরে আরেক হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে সে দু ঘরে তার ছেলে মেয়ে আছে ৮ জন। আমরা যখন (২০১৬ সালে মনির বাড়িতে আসার পর) জানলাম সে হিন্দু হয়ে গেছে তখন দুইদিনের বেশি আমাদের বাড়িতে তাকে থাকতে দেইনি। ও চলে গেছিল আবার কলকাতায়।”

“৬/৭ মাস আগে (২০১৯ সালে) পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার ভাই দেশে চলে আসে, এবং আত্মীয়দেরকে জানায় তার স্ত্রী-সন্তানদের সবাইকে নিয়ে মুসলমান হয়ে যাবে। এতে আমরা খুশি হই এবং তাদেরকে মেনে নিই।” এরপরই গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে (যেখানে মিজানুর রহমান আজহারী অতিথি ছিলেন) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা এর আগে ইসলাম গ্রহন করেনি। তাদের নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ছড়িয়ে অপ্রপচার চালাচ্ছেন এক শ্রেনি কিছু অসাধু সুবিদাবাদী।

এব্যাপারে পুলিশের হেফাজতের আগে মনির হোসেন বলেন, আমি ভারতে থাকাবস্থায় শঙ্ককর অধিকারী পরিচয় দিতাম। দেশে ফিরে পুর্বের পরিচয় দিয়ে একটি অটোরিক্সা চালিয়ে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে জীবন-যাপন করছি। তবে কালেশা পড়েনি এবং কাউকে কালেমা পড়াইনি। এখন আইনী প্রক্রিয়া শেষে তওবা করে পুনরায় কালেমা পড়ে মুসলিম হলাম।

স্থানীয়রা জানান, মনিরসহ তার পরিবার ইতিপূর্বে মুসলিম বলে পরিচয় দিলেও ইসলামী রীতিনীতি মেনে ধর্মান্তর হয়নি। পরবর্তীতে মনির ওরফে শঙ্কর অধীকারী মাহফিল কমিটির সাথে যোগাযোগসহ সহযোগিতা চাইলে তারা আদালতের মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্মান্তর করে নেয়।

এ বিষয়ে পুশি সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, মনির হোসেন নামে যিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন তার কাছে আমরা ভারতীয় বৈধ পাসপোর্ট পেয়েছি, যাতে তার নাম শঙ্কর অধিকারী। ফলে তিনি ভারতীয় নাগরিক।

তার সাথে অন্য যারা আছেন তাদের কয়েকজনরও বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। তারা গত বছরের ১৪ আগস্ট ২ মাসের ভিসা নিয়ে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। বর্তমানে তাদেরকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে আইনানুযায়ী তাদের ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই ১১ জনসহ একই পরিবারের ১২ জন সদস্যকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।
ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর