শ্রীনগরে বাসাবাড়িতে সাইনবোর্ডবিহীন কোচিং ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছেন

হাইকোর্টের নির্দেশেও বন্ধ হয়নি কোচিংবাণিজ্য! শ্রীনগরজুড়ে চলছে অবৈধ কোচিংবাণিজ্য। অর্থের ‘লোভে’ খোদ মানুষগড়ার কারিগর নামের অনেক শিক্ষকই শিক্ষার নীতিমালা ও নৈতিকতা ভুলে গিয়ে আদর্শ বিচ্যুত হচ্ছেন। শ্রীনগর জুড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার কোচিংবাণিজ্য চলছে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রায় একই রকম। কাক্সিক্ষত শিক্ষার পিছনে বছরে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে কোচিং সেন্টারগুলো। কোচিংবাণিজ্য কার্যত নিষিদ্ধ হলেও এমপিও তথা সরকারি বেতন-বাতা সুবিধাভোগি শিক্ষকরা কর্মস্থলে ফাঁকি দিয়ে অবাধে কোচিং ব্যবসা চালাচ্ছে।

জানা যায়, উপজেলার খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বনামধন্য শিক্ষকরাও নিজেদের তত্ত্বাবধানে বাসাবাড়িতে সাইনবোর্ডবিহীন কোচিং ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছেন। ব্যাচে ব্যাচে শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভুয়া পরীক্ষার্থী সরবরাহ ও মোটা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করারও জোরালো অভিযোগ উঠেছে কিছু কিছু কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে।

সচেতন মহলের অভিমত, ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংবাজ শিক্ষকরা কোচিং সেন্টারে ছাত্রছাত্রী ভিড়াতে নানাবিধ ফিকির-ফন্দি আঁটে। অনেক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষায় শতভাগ পাস করিয়ে দিবে বলে। অন্যদিকে ক্লাসে বোঝানো হয় না, তাই কোচিংয়ে পড়ি এমন উক্তি শিক্ষার্থীদের। উপজেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা বাসাবাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলে শিক্ষার দোকান দিয়ে বসেছেন। ফলে এ উপজেলার একমাত্র ওই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্রমেই অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিজ নিজ কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী ভিড়াতে অনেক শিক্ষকই ক্লাসে নিজেদের কোচিং সেন্টারের নানাবিধ সাফল্যের দিক তুলে ধরারও অভিযোগের অন্ত নেই। শিক্ষকরা শিক্ষা নামের নগ্ন বাণিজ্যে বেপরোয়াভাবে জড়িয়ে পড়ায় নিজ স্কুলের শিক্ষককের কাছেই গণিত, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থসহ পাঠ্যসূচির বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে বাধ্য হচ্ছে। কোচিং করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষার্থীদের অকপট উত্তর, ক্লাসে যা পড়ায়, তাতে হয় না। সেখানে ভালোমতো বোঝানো হয় না। তাই কোচিং তো করতেই হয়। শত শত শিক্ষার্থীর একই মনোভাব ক্লাসে বুঝি না। বোঝানো হয় না। অভিভাবকের মুখেও একই কথা শুনা যায়। অভিভাবদের অভিযোগ, সরকার কোচিং নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা সরকারের নিয়ম মানছেন না। তারা কর্মস্থলে পাঠদানে ফাঁকি দিয়ে কোচিংবাণিজ্য চালাচ্ছেন। সন্তানের ভালো রেজাল্টের আশায় কোচিং সেন্টারে পড়াতে বাধ্য হতে হয়।

উপজেলার প্রায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ অভিভাবকের ভাষ্য, আমরা স্কুলের বাইরে কোচিং সেন্টারে পড়াতে না চাইলেও স্কুলের ক্লাসে শিক্ষকরা তাদের ব্যক্তিগত কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেন। সন্তানও যেতে চায়। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়েই কোচিংয়ে পাঠাতে হয়।

অভিভাবকদের দাবির মুখে শিক্ষকদের কোচিংবাণিজ্যের রাশ টেনে ধরতে ২০১২ সালের ২০ জুন ‘কোচিং বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। এরপর ওই বছরের ২৫ জুন নীতিমালায় একটি সংশোধনী আনা হয়।

নীতিমালায় বলা আছে, সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। নীতিমালা না মেনে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালার এ অংশও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সবাইকে কোচিংয়ে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষক স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে ব্যক্তিগত কোচিং ব্যবসা খুলেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা তুলে পুরো টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, নীতিমালা না মানলেও শাস্তি পেতে হয় না। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় কোচিংবাণিজ্য চলছে। লোক দেখানো এই নীতিমালা রেখে লাভ কার প্রশ্ন অভিভাবকদের।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুরাইয়া আশরাফী বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর