বাড়ি ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মীকে গণধর্ষন

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের এক নারী গার্মেন্টসকর্মী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নারীর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউপির মির্জাপুর গ্রামে।

গত ২৪ জানুয়ারি সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘি এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বর্তমানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

গত ২৩ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের চাঁনধরা এলাকায় পিকআপে উঠার পর এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী তিন বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি ন্যাশনাল ডেনিমস লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তার ৮ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। গার্মেন্টেসের কাছেই একটি মেস ভাড়া করে থাকেন।

ওই নারী জানান, ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টায় গার্মেন্টস ছুটি হলে তিনি জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রথমে তিনি আশুলিয়া থেকে বাসে গাজীপুরের চানধরা এলাকায় নামেন। সেখান থেকে একটি পিকআপ গাড়িতে উঠেন। এ সময় ওই পিকআপে আগে থেকেই বসে থাকা মাঝবয়সী অজ্ঞাত একজন লোক কোথায় যাবে বলে তাকে জিজ্ঞেস করে। সে ওই নারীকে অভয় দেখিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানায়।

ওই নারী জামালপুরে যাবে শুনে পিকআপের চালকও বলে তারাও জামালপুরে যাবে। পিকআপ গাড়িটি চানধরা থেকে ছাড়ার পর কিছুদূর গিয়ে অন্য যাত্রীরা নেমে গেলেও তার পাশে থাকা যাত্রীটি একটি ফলের জুসের প্যাকেট কিনে ফের সেই পিকআপে উঠেন। জুসের প্যাকেটটি ওই নারীকে খেতে দেন। প্রথমে না করলেও সরল বিশ্বাসে জুস খাওয়ার পরই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। তাকে ধর্ষণ করে সাগরদিঘিতে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়।

ঘটনার পরদিন ২৪ জানুয়ারি ভোরে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘি এলাকায় রাস্তার পাশে ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার গলায় গার্মেন্টেসের পরিচয়পত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের জানান স্থানীয়রা।

একই সঙ্গে স্থানীয়রা ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে জামালপুরের শাহবাজপুরের মির্জাপুর থেকে ওই নারীর স্বজন কয়েকজন ব্যক্তি সাগরদিঘি থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। ২৫ জানুয়ারি বিকেলে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতনের শিকার ওই নারীর মা ও অন্যান্য নারী স্বজনরা ধারণা করছেন তাকে একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন।

তার মা জানান, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। দেখে মনে হচ্ছিল আধামরা হয়ে গেছে। তার গোপনাঙ্গে বেশ ক্ষত হয়েছে। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। নির্যতনকারীরা তার ব্যাগে থাকা একজোড়া রূপার নূপুর, একসেট জামা, পাঁচ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যাগটি তার পাশে ফেলে রেখে যায়।

জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. হাবিবুর রহমান ফকির বলেন, ওই নারীর নেশার ঘোর এখনো কাটেনি। তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হলেও এ সংক্রান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা না করে আগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে নার্সরা। ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শনিবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, তার জ্ঞান ফিরলেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু নেই তার। স্মরণশক্তি একেবারেই লোপ পেয়েছে। গুরুতর অসুস্থতায় কাতরাচ্ছেন তিনি।

এদিকে ঘটনাস্থল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘি হওয়ায় মামলা করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই নারীর স্বজনরা।

জামালপুর সদর থানা পুলিশ এ ঘটনা জানতে পেরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর খোঁজখবর ও ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে ওই নারীর স্বজনদের ঘাটাইল থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে।

জামালপুর সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান বলেন, একজন এসআইকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ওই নারীর পরিচয় ও ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। ওই নারীর দেয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল ঘাটাইলের সাগরদিঘি হওয়ায় ঘাটাইল থানাতেই মামলাটি করার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর