প্রেমের প্রস্তাব দেয়ায় কলেজ ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যা

সাতক্ষীরার আশাশুনির এক কলেজ ছাত্রীকে ভালবাসার প্রস্তাব দেওয়ায় এক কলেজ ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার পর খুলনায় ট্রেন লাইনে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা রেলওয়ে থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

মৃতের নাম শুভজিৎ সানা (১৯)। সে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গজুকাটি গ্রামের ভবতোষ সানার ছেলে ও বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র।

গজুয়ারকাটি গ্রামের কৃষ্ণপদ সানা জানান, তার কাকার ছেলে শুভজিৎ সানা বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের বানিজ্য বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। ফকরাবাদ গ্রামের হেমন্ত মণ্ডলের মেয়ে বড়দল কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর রিয়া মণ্ডলকে সে কয়েকদিন আগে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। রিয়া প্রেমের প্রস্তাব মেনে নেয়নি।

বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ও শুভজিতের মাসতুতো ভাই মনীষ মণ্ডল বলেন, শনিবার সকাল ১১টার দিকে কলেজের দোতলার সিঁড়িতে রিয়াকে ডেকে নিয়ে আবারো প্রেমের প্রস্তাব দেয় শুভজিৎ। রিয়া আবারো প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শুভজিৎ ব্লেড দিয়ে নিজের হাতের কয়েকটি জায়গায় কেটে ফেলে।

বিষয়টি জানতে পেরে সাতক্ষীরায় অবস্থানরত অধ্যক্ষ মোঃ সাহাবুদ্দিনকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তার পরামর্শ মত শুভজিতকে বাড়িতে পাঠানোর জন্য দুপুর ১২টার দিকে একটি ভ্যানে তুলে দেন। এরপর সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভজিতের বউদির মোবাইল ফোনে ট্রেনে কেটে তার বিষয়টি অবহিত করেন।

খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে রবিবার দুপুর একটার দিকে শুভজিতের লাশ তার ফুফাত ভাই বিজন মণ্ডলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। লাশের গলায় আংশিক চামড়া লাগানো ছিল। দু’ পা বিচ্ছিন্ন ও পেটের নাড়ি ভুড়ি বের করা অবস্থায় ছিল। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়।

শুভজিতের বড় ভাই অনুপম সানা জানান, তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভারতের কর্ণাটক থেকে ভাই এর মোবাইল ফোনে রিং দিলে অপর প্রান্ত থেকে একজন বলেন, সে মারা গেছে। অথচ তার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা গেল না। তিনি আশঙ্কা করছেন রিয়ার বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার বিকেলে তাদের গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেবব্রত সরকারের বাড়িতে এসে শুভজিৎ সম্পর্কে হুশিয়ারি দিয়ে গেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন রিয়ার বাবা লোকজন দিয়ে শুভজিতকে অপহরণ করিয়ে হত্যার পর লাশ খুলনার ট্রেন লাইনে ফেলে দিয়েছে। শুভজিতের লাশ সোমাবার দুপুরে স্থানীয় শ্মশানে দাফন করা হবে।

বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন বলেন, শুভজিৎ এক বছর আগেও মাাদিয়ার একটি ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকার এক শিক্ষককে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে শনিবার কলেজ থেকে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল শুভজিতের। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববার কলেজ ছুটি দিয়ে সকল শিক্ষকগণ তার বাড়িতে গিয়েছিলেন।

ফকরাবাদ গ্রামের হেমন্ত মণ্ডল বলেন, তার মেয়েকে উত্যক্ত করার বিষয়টি গজুয়াকাটি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেবব্রত সানার মাধ্যমে শুভজিতের বাবা ও মাকে সতর্ক করা হয়। শুভজিত কিভাবে মারা গিয়েছে এটা তাদের জানার কথা নয়।

খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফয়জুর রহমান বার্তা বাজারকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় নিউমার্কেট গোরস্থান এলকায় ট্রেনে কাটা একটি লাশ উদ্ধার করেন তারা। মৃতের ব্যাগে থাকা একটি নোট বুক থেকে নম্বর পেয়ে তার বাড়িতে জানানো হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় শনিবার একটি অপমৃত্যু (২নং) মামলা হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটি হত্যা হলে নতুন মামলা নেওয়া হবে।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বার্তা বাজারকে বলেন, বিষয়টি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হত্যা নিশ্চিত হলে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শুভজিতের পরিবারকে।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর