পাঠদানে অনিয়ম, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারীতায় চলছে বিদ্যালয়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর খাটামারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরকুলাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় স্কুলে আসলেও শিক্ষকরা কেউই যথাসময়ে স্কুলে আসেননা।
শিক্ষকরা যথাসময়ে স্কুলে না আসায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

বুধবার (২২ জানুয়ারী) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিস রুমের তালা খুলছেন পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী শাকিল। তাকে স্কুলের শিক্ষকদের কথা জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, শিক্ষকেরা আসেন ১০টার সময়।
এদিকে ক্লাশ রুমের বারান্দায় কিছু শিক্ষার্থীকে মারবেল খেলতে দেখা যায়।

তাদের সাথে কথা বললে তারা জানায় প্রতিদিন সকালে স্কুলে এসে তারা মারবেল খেলে, ক্লাশ শুরু হলে ক্লাশ করে। অবসর সময় পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেনো মারবেল খেলে আনন্দ উপভোগ করছে। জানা যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাড়ি স্কুলের সাথেই।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে সময় যখন সকাল ৯.৪০মিনিট তখন স্কুলে আসেন সহকারী শিক্ষক মোঃ তাহের আলী, সকাল ৯.৪৫মিনিটে আসেন সহকারী শিক্ষিকা রুমিনা আক্তার।

স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে গিয়ে ডাকলে তিনি সকাল ১০টায় স্কুলে আসেন।
প্রতিবেদক স্কুলে থাকা অবস্থায় আরেকজন সহকারী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম স্কুলে আসেননি।

দেরিতে স্কুলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, আমি দেরিতে স্কুলে আসিনি, আমি সকালে স্কুলে এসে পতাকা উত্তোলন করে সবগুলো ক্লাশরুমের দরজা খুলে দিয়েছি।
অপরদিকে চরকুলাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯.২০মিনিটে গিয়ে দেখা যায় অফিস পিয়ন বাবর আলী পতাকা উত্তোলন করে ক্লাশরুমের দরজা খুলে দিচ্ছেন।

তার সাথে কথা বলে জানা যায় কোনো শিক্ষকই সকাল ৯টায় স্কুলে আসেননা। অফিস পিয়নের সাথে কথা বলা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুলে আসেন সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম ও ফজলু হক। সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের বাড়ি স্কুলের পাশে হলেও নিয়মিত স্কুলে দেড়িতে আসার অভিযোগ রয়েছে তার উপর। ওই স্কুলে ৬জন শিক্ষক থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত বাকি চারজন শিক্ষকের কেউই আসেননি।

পরবর্তীতে সকাল সাড়ে দশটায় সহকারী শিক্ষক শ্রাবনী রাণী,সুমনা রায়,কহিনূর পারভীন একসাথেই স্কুলে আসেন। প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসার কারন সম্পর্কে সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন তিনি অসুস্থ তাই হয়তো স্কুলে আসেননি। তবে স্কুলের সার্বিক দ্বায়িত্ব তিনিই পালন করেন বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম।

শিক্ষকদের দেরিতে আসার বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, শিক্ষকরা দেরিতে আসলে আমাদের সন্তানদের পাঠদান ব্যাহত হয়। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার কার্যালয়ে আসলে তাকে পাওয়া যায়নি।

মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি অফিসিয়াল কাজে বাহিরে আছি। ওই সময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে ঘোড়াঘুড়ি করেন চরকুলাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সময়সূচী নির্ধারন করা আছে, নির্ধারিত সময়ে যদি কেউ ক্লাশ শুরু না করে এবং কেউ যদি বিলম্বে স্কুলে আসে এরকম অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে অবশ্যই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

বক্তব্য নেওয়াকালীন সময়ে আবারও চরকুলাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম জেলা কার্যালয়ে আসেন। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামকে জিজ্ঞেস করেন স্কুল চলাকালীন সময়ে অফিসে কেনো এসেছেন, উত্তরে ওই শিক্ষক বলেন বদলি জনিত কারনে কথা বলতে জেলা কার্যালয়ে এসেছি। পরবর্তীতে স্কুল চলাকালীন সময়ে ছুটি না নিয়ে জেলা কার্যালয়ে আসতে নিষেধ করে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর