ইবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ১৫ (ভিডিওসহ)

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদক এবং পদবঞ্চিত বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে।এসময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় গ্রুপের প্রায় ১৪ জন নেতাকর্মী এবং একজন প্রক্টর আহত হন। বিদ্রোহীদের হামলায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ এবং সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আরিফুল ইসলাম আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ ও সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় পদঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

বেলা ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে খবর পেয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা হল থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে প্রধান ফটকে ছুটে আসে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। যা একপর্যায়ে পাশ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বিদ্রোহী গ্রুপের এক কর্মীকে ৩-৪টি ককটেলের বিস্ফোরন ঘটাতে দেখা যায়। (ককটেল বিস্ফোরণের ভিডিও ফুটেজ এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে)। সংঘর্ষে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আহতদেরকে চিকিৎসা দিতে পাঠানোর জন্য মাহিন্দ্রায় তুলে দিতে গেলে সেখানেও সম্পাদক রাকিবকে বেদম প্রহার করে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। এসময় সহকারী প্রক্টর আরিফুল ইসলাম আহত হন এবং সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছিতও করা হয়

এর আগে বেলা ১১টায় সভাপতি ও সম্পাদকের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রধান ফটকে অবস্থান নিলে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয় এবং এক পর্যায়ে ইংরেজি বিভাগের আমিন হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে তাকে মারধর করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

এদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রধান ফটকে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে রাখলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবী। আল-আমীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণে এতোবড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এবিষয়ে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, সকাল থেকেই টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের সভাপতি পলাশ,সাধারণ সম্পাদক রাকিব গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত। তারা আজকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য চেষ্টা করছিল তাদের লোক জন নিয়ে। পদবঞ্চিত নেতা লালন আরাফাতরা তাদেরকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে দু গ্রুপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। কয়েকজন আহত হয়, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আর তিনটা ককটেল নিক্ষেপের শব্দ আমি শুনতে পেয়েছি কিন্তু অস্ত্রের ব্যবহার আমি দেখিনি।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে চাচ্ছিলাম। এজন্য তারাও এক হয়েছিল কিন্তু সেখানে তারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয়। আর তার প্রতিবাদে আমরা মিছিল দিলে সেই মিছিলে পুনরায় হামলা চালিয়ে আমাদের সাধারন সম্পাদক সহ বেশ কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং অনেকেই আহত হয়। তাই তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. আনিচুর রহমান বলেন, মূলত ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সম্পাদক তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে চেষ্টা করে। এসময় বিদ্রোহীদের ধাওয়ায় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আহত হয়। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি এবং পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে সহর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন শান্ত রয়েছে। প্রথমত তারা হাইওয়ে বন্ধ করে দেয় পরে আমরা কথা বললে তারা হাইওয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়, এখন আমরা কথা বলছি, আশা করি দ্রুতই তারা প্রধান ফটক খুলে দেবে।

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য “বার্তা বাজার”কে বলেন, ‘এটা আসলে দুঃখজনক একটা ব্যাপার। ছাত্রলীগ সবসময় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাজ করে সেখানে এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করা খুবই দুঃখজনক। এর পেছনে কে আছে এবং অপরাধী যেই হোক তাকে খুঁজে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই পদবঞ্চিতের সাথে ঝামেলা হয়েছে। ধাওয়া দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।সেজন্য আমরা বলছিলাম ব্যাপারটা সুষ্ঠু ভাবে রাজনৈতিক মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেনো কিছু না করে। তারপরও তারা স্ব প্রণোদিত ভাবে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ গুলো করেছে, তারা যাই হোক না কেনো তারা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি তাদের গায়ে যারা হাত তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ অপরাধের শাস্তি তাদের পেতে হবে। খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইবি ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত বিদ্রোহী একটি গ্রুপ বর্তমান কমিটি প্রদানে অর্থনৈতিক অর্থ লেনদেন হয়েছে দাবি করে গত কয়েকমাস ধরে বর্তমান সভাপতি এবং সম্পাদককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এর আগে ও বেশ কয়েকবার সভাপতি, সম্পাদককে ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয় বলে জানা যায়।

ভিডিও…..

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ,ককটেল বিষ্ফোরণ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ,ককটেল বিষ্ফোরণ, আহত-১৪বিস্তারিত=> http://bartabazar.com/archives/119980

Gepostet von Barta Bazar am Dienstag, 21. Januar 2020

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর