জুয়ার টাকায় এনু-রূপন শতাধিক ফ্ল্যাটের মালিক

ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বহুল আলোচিত দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়ার নামে-বেনামে শতাধিক ফ্ল্যাটের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন এ দুই সহোদর।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, গত দশ বছরে তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে পুরান ঢাকায় শতাধিক ফ্ল্যাট কিনেছেন। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চার বিঘা জমি কেনেন। পাশাপাশি ঢাকায় এনু-রূপন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ২২টি বাড়ির মালিক হন। ক্যাসিনো এবং জুয়ার টাকায় এসব সম্পদ গড়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তারা।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এনু-রূপনের বৈধ আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও অস্বাভাবিকভাবে জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ক্যাসিনো এবং জুয়ার টাকায় তারা এ অস্বাভাবিক সম্পদ গড়েছেন।

তাদের জমি, বাড়ি এবং ফ্ল্যাটের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এসব সম্পদ অর্জনে বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা হবে। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, এনু-রূপন রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এদিকে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনু ও রূপনের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। এরপর সূত্রাপুর ও গেণ্ডারিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জ থেকে নগদ ৪২ লাখ টাকাসহ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরদিন ১৪ জানুয়ারি মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় আদালতের মাধ্যমে সিআইডি তাদের চার দিনের রিমান্ডে নেয়।

রিমান্ডে তারা অনেক তথ্য দিয়েছেন। রিমান্ড শেষে রবিবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিনই দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, এনু-রূপন রহস্যমানব। ক্যাসিনো ও জুয়ার টাকায় তারা একের পর এক বাড়ি আর ফ্ল্যাট কিনেছেন। মজুদ করেছেন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ। সেই স্বর্ণ আবার রাখতেন শৌখিন সিন্দুকে। তাদের দৃশ্যমান আয় নেই।

অথচ তাদের রয়েছে ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, তাদের লোহার শিটের বৈধ ব্যবসা রয়েছে। এ ব্যবসার লাভ দিয়ে তারা সম্পদ গড়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহার শিটের ব্যবসাটি লোকদেখানো। ওই ব্যবসায় তাদের কোনো লাভ হয় না। এ ব্যবসায় উল্টো লোকসান হয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের বাবা সিরাজুল ইসলাম একজন ভবঘুরে জুয়াড়ি ছিলেন। বাবার সঙ্গে তারা বিভিন্ন সময় আজাদ ক্লাবে যেতেন। বাবার হাত ধরেই এক সময় তারা ওই ক্লাবে জুয়া খেলা শুরু করেন। পরে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জুয়ার সঙ্গে জড়ান।

এর পরই তাদের অবৈধ সম্পদ গড়ার চাকা ঘুরতে থাকে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বড় পদও বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলীয় পদ পেয়ে তারা এলাকায় গড়ে তোলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী।

বার্তাবাজার/কেএF

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর