আগে মনু নদীকে দখল মুক্ত করতে হবে

মনুনদী ভরাট ও দখলের কারণে নদী নাব্যতা হারিয়েছে। সেজন্য এ নদীর উন্নয়নে মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একনেকের অনুমোদনের জন্য ১ হাজার ২ কোটি টাকা করা প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই প্রকল্প পাশ হবে। তবে এর আগে মনুনদীকে দখল মুক্ত করতে হবে।

শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর সভার উদ্যোগে পৌর জনমিলন কেন্দ্রে মনু নদীর সমস্যা, সম্ভাবনা ও অববাহিকায় টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা গুলো বলেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি।

মন্ত্রী আরও বলেন, মনু নদী আমাদের জীবনের একটি অংশ। এটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সকলের। নদী ভরাট হয়ে জমির উপরে উঠে গেছে। মনুনদীর তীরে গাছ লাগানোর জন্য আমার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। এই নদীর উন্নয়ন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনাও চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।

অর্থনীতিবীদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে ও পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সংরক্ষিত আসনের (মহিলা) এমপি সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন, জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. নজিবুর রহমান হাওলাদার,মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজিজুর রহমান,জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন,পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার)।

বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেন, বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্রাক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, ভিডিও চিত্রসহ জেলা নদী হাওরের সার্বিক চিত্র উপস্থাপনা করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী।

বক্তব্য রাখেন নদী হাওর রক্ষা কমিশনের চীফ কো-অডিনেটর এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান, পিডব্লিউডি এর কনসালটেন্ট সাজেদুর রহমান,মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফজলুল আলী, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী, জেলা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম ।

এছাড়াও আলোচনা সভায় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমদসহজন প্রতিনিধি, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী সহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোক উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘দেশের নদীর রক্ষায় এতদিন কোন অভিভাবক ছিল না বলেই, চোখের সামনে এভাবে অবৈধ দখল হয়েছে। যাদের উপর আইন প্রয়োগ করার দায়িত্ব ছিল, তারা কেউ সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এখন সময় এসেছে তাদের জবাবদিহিতা করার।

এসময় তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির আহবান জানান। নদী উদ্ধারে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। রাস্ট্রের ও জনগণের সম্পত্তি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সবার আগে তাদের দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে নদী রক্ষায় প্রশাসনের পাশে থাকতে হবে। তাহলে নদী রক্ষার কাজ সহজ হবে।

বাংলাদেশ ভূখন্ডের শুধু সৃষ্টি আর বসতির সঙ্গেই যে নদীর সম্পর্ক আছে, তা নয়। নদী এখানকার অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকার মূল উৎস। এই অ লের সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করে।

উচ্চ আদালতের ওই রায়কে যদি আমরা অন্যভাবে পাঠ করি, যেমন ধরেন নদী তো আসলে সব জীবনের উৎস। এই যে উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ, প্রকৃতি, বায়ুমন্ডল, অক্সিজেন এই সবকিছু থাকত না, যদি না নদী থাকত। আমরা বলি, পৃথিবীর এক ভাগ স্থল আর তিন ভাগ পানি। আমাদের মানুষের শরীরের ৬২ শতাংশ কিন্তু পানি।

ফলে সামগ্রিকভাবে নদী হচ্ছে জীবনের প্রধান আধার। সেই নদীকে যদি আমরা রক্ষা না করতে পারি, তাহলে মানুষও টিকবে না।‘নদী রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের ও জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।’

তিনি বলেন,‘স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সবার আগে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য তাদের প্রশাসনের পাশে থাকতে হবে। এতে করে নদী রক্ষার কাজ সহজ হবে।’

তিনি বলেন,আমরা এরইমধ্যে সারাদেশের ৪৯ হাজার ১৬২ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করেছি। আইনুন নিশাত বলেন,সকাল বেলা মনুনদীর পার ঘুরেছি। ব্যারেজ দেখেছি। যে এলাকাতে বন্যার সময় নদীটা ভেঙ্গেছিল সে এলাকাতেও গিয়েছি। আমার সাথে প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী ছিলেন।

তখন আমি তাকে একটা প্রশ্ন করেছি যে,বন্যায়সময় কি নদী উপচে পানি পড়েছিল?। তার উত্তর হচ্ছে, না বাঁধ উপচে পানি উঠেনি। এটা ভেঙেছিল। তাহলে,আমরা যে অবকাঠামো বানাই না কেন এটাকে যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষন না হয় তাহলে কোনও অবকাঠামো কাজ করবে না।

একটা জিনিস মনে রাখবেন,বন্যা নিয়ন্ত্রণ,বন্যা ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বন্যা হলে যে ক্ষতি হয়,অবকাঠামো থাকার পরে বন্যা হলে ক্ষতি অনেক অনেক অনেকগুন বেশী হয়। তখন মানুষের প্রস্তুতি থাকে না। আপনারাই বলেছেন যে,মৌলভীবাজারে বর্ষার সময় শহর থেকে ৫ ফুট ৭ফুট উঁচু দিয়ে মনু নদীর পানি প্রবাহিত হয়। যদি কোনও কারণে শহরে পানি ঢুকে তাহলে বিরাট ক্ষতি হতে পারে।’

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর