পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া রপ্তানিযোগ্য করতে হবে

বর্তমানে দেশে পাঁচ লক্ষ টন পাঙ্গাস ও চার লক্ষ টন তেলাপিয়া উৎপাদন হচ্ছে। দেশের মোট মাছ উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগ তেলাপিয়া ও শতকরা ১৩ ভাগ পাঙ্গাস থেকে আসে। মাছের উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে কমে যাচ্ছে এর দাম। বর্তমানে দেশে মাছ উৎপাদন প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন যা আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের অতিরিক্ত। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার দাম বাড়ানোর জন্য মূল্য ক্রমের উন্নয়ন, রপ্তানীযোগ্য করা এবং উৎপাদনের সঠিক ও আধুনিক মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে। প্রজাতি দুটির সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্বাদু ও পুষ্টিমান ঠিক রেখে তা আমরা বিদেশে রপ্তানী করার পাশাপশি দেশেই চাহিদা সৃষ্টি করতে পারি। চিংড়ীর পরেই প্রজাতি দুটির বিদেশে রপ্তানীর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘আপগ্রেডিং পাঙ্গাস এন্ড তেলাপিয়া ভ্যালু চেইন ইন বাংলাদেশ’ শির্ষক ফইনাল স্টকহোল্ডার কন্ফারেন্সের মূল বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন ইউএসআইডি এর ফিড দ্যা ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর ফিস এর বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. এম. গোলাম হোসাইন।

বাংলাদেশে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের চাষ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা, মাছের উৎপাদন খরচ কমানো, মোট উৎপাদন বৃদ্ধি,অরুচিকর গন্ধ দূর করে রুচিকর সুগন্ধযুক্ত সুস্বাদু, লাভবান ও রপ্তানিযোগ্য করতে শনিবার বিকাল ৩ টায় বাকৃবির সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ডেনিস ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভেলোপমেন্ট এজেন্সির (ড্যানিডা) অর্থায়নে ব্যাংফিস ওই সম্মেলনের আয়োজন করে।

ব্যাংফিস প্রকল্পের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর এবং পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবসায় প্রশাসন এবং পরিচালনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এমপি। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগের মহা পরিচালক কাজী সামস আফরোজ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউটের মহা পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ব্যাংফিসের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. ম্যাক্স নেইলসেন। এছাড়াও ডেনমার্কের সাউদার্র্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন অধ্যাপক সহ বাকৃবি ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, তেলাপিয়া এবং পাঙ্গাস মাছ সাধারণ মানুষের প্রোটিন। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মাছের খাবারের দাম কমাতে হবে। মৎস্য চাষে অশিক্ষা কলুষিত করছে আমাদের মাছ চাষ ব্যাবস্থা। আমার মাছ আমিই খাব এটা ভেবে আমাদের উৎপাদন করতে হবে তাহলে মাছের গুনগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং দামও অশানুরূপ হারে বাড়বে।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে ব্যাংফিসের ওর্য়াক প্যাকেজ-৩ এর টিম লিডার ও কৃষি অর্থসংস্থান বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামন খান বলেন, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের মাধ্যমে বিশ্বের মাছের বাজারে অবদান রাখার জন্য এই প্রোজেক্ট শুরু করা হয়। বিগত ২ দশকে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের হলুদাভ রং ও দূষণকারী পদার্থ বহনের জন্য চাহিদা খুবই কমে গিয়েছে। তাই মাছের হলুদাভ রং কমানো এবং স্বাদ বাড়ানোর জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো।

সম্মেলনে ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজ এর অর্জিত সাফল্য ও অগ্রগতির উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি প্যাকেজেই বেশকিছু আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে, যা পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ, মাছ বিপনণ ও রপ্তানীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। আ লিক উৎপাদন ও খামারের ঘনত্ব, মাছের উৎপাদনশীলতা ও মুনাফাকে প্রভাবিত করে। খাবারের ও পানির গুণাগুন, বিশেষায়িত উৎপাদন উপকরণে মাছের গুণাবলী, দাম ও চাহিদার ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

উল্লেখ্য, এর পূর্বে এ বিষয়ে আরো তিনটি কর্মশালা আয়োজন করা হয় এবং এ প্রকল্পের আওতায় স্নাতকত্তোর ও পিএইডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বার্তা বাজার/এস.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর