সীমান্তে বেড়েছে চোরাকারবারি, চুরারুঘাটে ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতাসহ আটক ২

রাতের আঁধারে ঘন কুয়াশায় সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দিন দিন বেড়েই চলছে চোরাচালান। বেড়েছে চোরা-কারবারিদের দৌড়ঝাপ। চুনারুঘাটে দুটি পিকআপ ভর্তি বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতাসহ দু’জনকে আটক করে সিআইডি।

হবিগঞ্জ-৪ চুনারুঘাট ও মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা নিম্নমানের চোরাই চা পাতায় সয়লাব হয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরের বিভিন্ন হাঠ-বাজার। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেও চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন।

ফলে দিন দিন দেশী চা পাতার বাজারে ধ্বস নেমে এসেছে। লোকসানের মুখে পরেছেন চা বাগানের মালিকরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, চুনারুঘাট ও মাধবপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সম্প্রতি এর মাত্রা আরও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে প্রতি রাতেই ভারত থেকে সীমান্তের অবৈধ পথগুলো দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে লক্ষ-লক্ষ টাকার নিম্নমানের চা পাতা। এসব চা পাতা জেলা ও উপজেলাসহ উত্তরা লের বিভিন্ন বাজারে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।

নিম্নমানের এসব চা পাতা বাজারে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন দেধারছে। ফলে উন্নতমানের দেশি চা পাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। চায়ের রের্কড পরিমাণ উৎপাদণ হলেও লাভের মুখ দেখছেন না চা বাগানের মালিকরা। এ ব্যাপারে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে দফায় দফায় মিটিং করেও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না সীমান্তের চোরাচালান।

এদিকে, চোরাচালন রোধে প্রতি রারেই কঠোর নজরধারী রেখে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। বিজিবি থেকে শুরু করে পুলিশ, ডিবি এমনকি সিআইডিও এখন চোরাকারবারিদের ধরতে রাতে আঁধারে অভিযান পরিচালনা করছে।

গ্রেফতার ও চোরাই পণ্য জব্দও করা হচ্ছে কয়েকদিন পরপরই। কিন্তু এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না চোরাকারবারিদের। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) রাতেও চুনারুঘাট থেকে ৩ হাজার ৯১৩ কেজি ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতা জব্দ করে সিআইডি। এ সময় দুটি পিকআপ ভ্যানসহ দুইজনকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেওরগাছ গ্রামের রমিজ আলীর ছেলে মোঃ রতন মিয়া (১৮) ও একই উপজেলার কালিশীড়ি গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে তাহের মিয়া (২২)। তারা দুজ’ই পিকআপ চালক। তবে এ সময় মূল পাচারকারীরা পালিয়ে যায়।

সিআইডির পরিদর্শক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান- শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) ভোররাতে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে দুটি পিকআপ চাঁনপুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সিআইডি পুলিশ পিকআপ দুটি আটক করে তল্লাশি করলে বস্তা ভর্তি ৩ হাজার ৯১৩ কেজি চোরাই চা পাতা পায়।

এসময় পিকআপের দুই চালককে আটক করলেও পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। জব্দকৃত চা পাতার বাজার মূল্য ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৯শ’ টাকা বলে জানায় সিআইডি।

এ ব্যাপারে সিআইডি পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে আটককৃতদের সদর থানায় হস্থান্তর করে। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারী) তাদের আদালতে তুলা হবে বলে জানায় সিআইডি। শুক্রবার রাতে জেলা সিআইডি কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।

চন্ডিছড়া চা বাগান ব্যাবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে নিম্নমানের চা পাতা প্রবেশ করায় বাগানগুলো ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব বন্ধ না হলে দেশীও চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’

সীমান্ত দিয়ে শুধু ভারতীয় নিম্নমানের চা পাতা আসছে এখানেই শেষ নয়। সাথে আসছে যুবসমাজ ধ্বংসের মরণ নেশা ভারতীয় মাদকদ্রব্য। আর এগুলো প্রবেশ করছে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে।

চোরাচালানের সাথে জড়িত চোরা কারবারিরা বিজিবির সাথে আতাত করে রাতের আঁধারে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বিভিন্ন ব্যন্ডের মাদক সামগ্রী। মাদক আমদানীর নিরাপদ রোড হিসাবে পরিচিত উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বাল্লা, টেকারঘাট, কেদারাকোট, আমু ও নালুয়া চা বাগান, গনকিরপাড়, ইকরতলী, সাদ্দামবাজার এবং গুইবিল, চিমটিবিল খাসপাড়া রোডগুলো।

আর ভারতীয় গরু চোলাচালানির গডফাদাররা দিন দিন সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভারতীয় গরু চোরাচালানি করে তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। তাদের ভয়ে সীমান্তে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়না।

কারো কোন তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে করছে গরু চোরাচালানি। এখানেই থেমে নি, এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে চাহিদা পুরণ করতে আমদানি করা চীনা রসুন, বুট, ছোলা, ডাল ও ইলিশ মাছ।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর