এ কোন বাংলাদেশের গল্প শোনাচ্ছি আমার মেয়েকে !

প্রতিদিন সকালে আমার মেয়ের সঙ্গে বলা অনেক কথার মধ্যে নিয়ম করে জিজ্ঞেস করি, ‘মা, তোমার মায়ের দেশ কোনটি বা সব থেকে সেরা দেশ কোনটি?’ আমার ১৫ মাসের মেয়েটি আধো আধো বাংলায় প্রতিবার বলে ‘বাম্মাদেশ’ (বাংলাদেশ)। আমার মেয়েটি হয়তো প্রবাস দূরত্বে আমার মতো করে দেশকে অনুভব করতে পারবে না। কিন্তু তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কিছু গল্প তো জানতেই হবে। তার মায়ের দেশের জন্মের গল্পটি, ভাষার অনন্য গল্পটি।

কিন্তু আজ নুসরাতের বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু হারিয়ে ফেলে মনে হলো, এ কোন বাম্মাদেশের (বাংলাদেশ) গল্প আমি আমার মেয়েকে চেনাচ্ছি। কেনই বা প্রতি রাতে মেয়েকে ঘুমাতে নিয়ে দেশের গান গেয়ে চোখের জল ফেলছি। এই মেয়েটি বড় হয়ে তার নিজের চোখ দিয়ে আসলে কোন বাংলাদেশের ছবি দেখবে? তার মায়ের চোখের জল ফেলে শোনানো দেশের অহংকারের গল্পটি সে বিশ্বাস করবে কি?

নুসরাতের এ বয়সে তো কতশত স্বপ্ন থাকার কথা। একজন নুসরাতের তো নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাওয়ার কথা। একজন ছোট নুসরাতের স্বপ্ন পূরণ করতে, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তো আমাদের নতুন কোনো বঙ্গবন্ধু, ম্যান্ডেলা, ফ্রেডেরিক ডগলাস, কার্ল মার্ক্স বা একজন মহাত্মা গান্ধীর প্রয়োজন নেই। যে দেশের তরুণেরা নিজের ভাষা পেতে পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেন। নিজের দেশের জন্য অবলীলায় জীবন বিলিয়ে দেন, যেখানে একজন জাহানারা ইমাম একজন রুমির বিনিময়ে দেশের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন থেকে কত দূরে সরে গেলে, নুসরাত বা তনুরা নিজের স্বাধীন দেশে নিরাপত্তা হারায়।

একজন নুসরাতের মাকে মেয়ের জীবন গড়তে পাঠিয়ে মেয়ে হারিয়ে নির্বাক হতে হয়। সেই স্বপ্নের দেশে এসব নরপিশাচ শিক্ষকদের কেন ঠাঁই হয়? এমনকি দেশ এখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার দিয়ে রীতিমতো চমকে দিচ্ছে, অথচ মানবতার উন্নয়ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো ছড়িয়ে পড়ছে না কেন? এখনো ট্রাফিক সিগন্যালে ফুটফুটে মেয়েটিকে ফুল বিক্রি করে অনিশ্চিত জীবনযাপনই বা করতে হবে কেন?

তারপরও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে আর কোনো ফুটফুটে মেয়েকে নুসরাত বা তনু হতে হবে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে দেশ থেকে দূরে বসে কোনো নুসরাতের মায়ের জন্য আর কোনো দিনও চোখ ভেজাতে হবে না। শুধু পরম মমতায় প্রতিবার সেই আনন্দ-অশ্রু ঝরবে, প্লেন যখন দেশের বিমানবন্দরে নেমে প্রথম মাটিটি স্পর্শ করে বা দেশে ফিরে প্রতিবার একটি মিশ্র পুলকের অনুভূতিতে চোখ ভিজে যাবে দেশকে বড় বড় অবকাঠামো নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে দেখে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে মায়ের বলা দেশের গল্পটি মেয়ে মমতা নিয়ে অনুভব করতে পারবে। সেই বাংলাদেশের ছবি দেখতে ইচ্ছে করে, যেখানে নুসরাত, তনু বা ট্রাফিক সিগন্যালে ফুল বিক্রেতা ফুটফুটে মেয়েটির জীবন এখানে আমার মেয়ের পাওয়া নিরাপত্তার মতো নিশ্চিত

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর