নুসরাতের ভালোবাসায় আবেগঘন স্ট্যাটাস শিক্ষামন্ত্রীর

অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে অশেষ ভালোবাসা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আইসিইউতেই মারা যান নুসরাত। বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মো. ছাবের সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার নামাজের ইমামতি করেছেন নুসরাতে বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা। নামাযে জানাযা শেষে পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদির পাশে দাফন করা হয় নুসরাতকে।

নুসরাতের চলে যাওয়াতে দেশের মানুষ শোকাভিভূত। যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কন্ঠস্বর নুসরাতের প্রতি সবাই সহানুভুতি প্রকাশ করছে। যদিও দুর্বৃত্তদের আগুনে নিভে গেছে তার কন্ঠস্বর তবুও আজ সবাই তার সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

তাদের দলে যুক্ত হলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও। তিনি নুসরাতের প্রতি অশেষ ভালবাসা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফাইড আইডি থেকে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন।

শিক্ষামন্ত্রীর ভালোবাসার কথাগুলো তুলে ধরা হলো—

‘‘নুসরাত চলে গেল। যাবেই জানতাম সবাই। বাঁচার কোন আশাই ছিল না। সবাই শোকাভিভূত। আমাদের সবার শুধু নিজের কন্যাটি নয়, কন্যাসমা সকল নুসরাতের মত সদ্য কৈশোর পেরোনো মেয়েগুলোর কথা মনে হচ্ছে। কিংবা সব নারীর কথা, হোক সে শিশু, কিশোরী, তরুণী, মাঝবয়েসী বা তার চেয়েও বয়সে বড় কেউ।

যারা মহানগরে, শহরে কিংবা গ্রামে থাকে। বিত্তবান কি বিত্তহীন, সে যে কোন পরিবারেরই হোক। পোশাকে আধুনিক বা রক্ষণশীল কিংবা একেবারেই বোরখায় আবৃতা। মানুষরূপী অমানুষগুলো ঘরে, বাইরে যেখানে যখন যেভাবেই সুযোগ পায় নারীকে দেখে শুধুই দেহ এবং কতগুলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হিসেবে, শুধুই লালসা পূরণের বস্তু হিসেবে।

আমরা এত এগিয়ে যাচ্ছি এত দিকে। নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়েছি বহুদূর। কিন্তু নারীকে মানুষ ভেবে, তার মানুষ হিসেবে অধিকারের কথা ভেবে, তার মানবিক মর্যাদার কথা ভেবে কবে আমরা তাকে ঘরে, বাইরে, চলার পথে, কাজের জায়গায়, সর্বত্র নিরাপত্তা দিতে পারবো কিনা জানি না। যাদের আমরা উন্নত দেশ বলি সেখানেও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটে অহরহই। সর্বত্রই তাই নারীর জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়বার চেষ্টা চলছে। চলছে আমাদের দেশেও।

অনেক সহিংসতার খবরই আমরা পাই। কিন্তু নুসরাতের প্রতি ঘটে যাওয়া অপরাধ সবাইকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে। সবাই আরও লজ্জিত, ক্ষুব্ধ হয়েছে, কারণ অপরাধী হিসেবে যাকে নুসরাত অভিযুক্ত করেছে, তার পক্ষে প্রতিবাদী মিছিল হয়েছে এবং অভিযুক্তের তারা নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নুসরাতের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেবার অপরাধে এ পর্যন্ত দু’জনকে

আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করি অপরাধের যথোপযুক্ত বিচার হবে, অপরাধীদের শাস্তি হবে।

আজ নুসরাত সকল কিছুর উর্ধ্বে চলে গেছে। কোন বিচার, কোন শাস্তিই আার তাকে ফিরিয়ে আনবে না। কিন্তু নুসরাতের এ মর্মান্তিক মৃত্যু ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রকে যে প্রশ্নের সামনে আজ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তার উত্তর আমাদেরই দিতে হবে।

আমাদেরই পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে, চলার পথে, সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা, তার অধিকার, তার মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করতে হবে। সকল স্তরে এ সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যে কোন ব্যত্যয়কে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে যেন কেউ এমন অপরাধ করবার সাহস না পায়।

শিক্ষার প্রতিটি স্তরে এ বিষয়গুলো এমনভাবে শেখাতে হবে যাতে এ মূল্যবোধগুলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নারীর জীবনকে যে নিরাপদ ও মানবিক মর্যাদাপূর্ণ করতে আজ আমাদের করতে হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ, আগামী প্রজন্মের জন্য তা যেন হয় সমাজের স্বাভাবিক রীতির অংশ।

প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে আসুন নারীর প্রতি যে কোন সহিংসতা প্রতিরোধ করি। ঘরে, বাইরে, পথে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, সর্বত্র। নুসরাতের জন্য অশেষ ভালোবাসা।’’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর