স্বাভাবিক হওয়ার আগেই পেঁয়াজের দাম আবারও চড়া

পেঁয়াজের ঝাঁজ আবার কাঁদাতে শুরু করেছে ভোক্তাদের। দাম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই আবারও বেড়েছে মশলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজের। গতকাল রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আমদানি করা বড় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে চিনি, তেল, আদা ও রসুনের দাম। মান ভেদে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজে ৫০ টাকা, আদার দাম কেজিতে ৩০ টাকা এবং রসুনের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, কারওয়ানবাজার, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, ফকিরেরপুল ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মাছ-গোশতের দাম তেমন না বাড়লেও শীতের মৌসুমি সবজির দামও চড়া।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব অবশ্যই দেশীয় বাজারে পড়বে, তা রোধ করা কঠিন। তবে তদারকি ভাল হলে সিন্ডিকেট করে ভোক্তা ঠকানো সম্ভব হয় না।

শীতের সবজির দাম এখনো চড়া। রাজধানীর বাজারগুলোতে একটি ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট কাঁচা মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, পালং শাক, মুলা শাক, সরিষা শাকের সরবরাহ বাড়লেও দাম তেমন কমেনি। রাজধানীর বাজারগুলোতে শিমের দাম কিছুটা কমেছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে যে দেশি রসুন কেজি ১৬০ টাকা বিক্রি হতো, সেই রসুন এখন ২০০ টাকা। আর ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদা ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারের দামের সঙ্গে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর দামের পার্থক্য পাওয়া গেছে। তবে টিসিবির হিসাবেও সপ্তাহের ব্যবধানে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকার মতো। ক্রেতারা জানান, সরবরাহ বাড়লেও কোনো সবজির দাম কমেনি। উল্টো কিছু সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে।

শিম, টমেটো, নতুন আলুর দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, বরবটি, বেগুন, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়ার দাম। বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের মতো বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি আগের সপ্তাহের মতো ৩০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। পেঁপেও ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। মুলা পাওয়া যাচ্ছে ২০-৩০ টাকার মধ্যে। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। করলা ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজার ভেদে এই মূল্যের কিছুটা কমবেশি রয়েছে। বাজার ও মানভেদে পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০-১২০ টাকা। বাজারভেদে কাঁচা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা, মানভেদে নতুন গোল আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা।

যাত্রাবাড়ি এলাকার বাজারে ভালো মানের দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। রসুনের মতো বাজারগুলোতে বেড়েছে আদার দামও। গত সপ্তাহে যে আদার কেজি ১১০-১২০ টাকা ছিল, এখন দাম বেড়ে সেই আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি।

আদা রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে শনিরআখড়ার ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, আদা-রসুনের দাম এখন বেশ চড়া। আমাদের আগে কেনা বলে দেশি রসুন ১৮০ টাকা এবং আদা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। কিন্তু দু’দিন পরে এই দামে আর বিক্রি করা সম্ভব হবে না।

তিনি জানান, পাইকারিতে ইতোমধ্যে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। শান্তিনগর বাজারেও আদা ও রসুন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ বাজারে ঝুলিয়ে রাখা মূল্য তালিকার সঙ্গে দামের মিল নেই। মূল্য তালিকায় আদা ১২০ টাকা এবং রসুনের কেজি ১৭০ টাকা লেখা হলেও আদা ১৫০ টাকা এবং রসুন ১৮০-২০০ টাকার কম পাওয়া যাচ্ছে না।

টিসিবি দ্রব্যমূল্যের দামের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তার তথ্য অনুযায়ী দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা। আমদানি করা রসুন আগের সপ্তাহের মতো ১৪০-১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে । আর আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০-১৭০ টাকা। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ, আমদানি করা পেঁয়াজ, আলু, চিনি, সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ ১৬০-১৮০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকা কেজি। ৫ লিটারের সয়াবিল তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৫১৫ টাকা।

তবে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগের দামেই চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৬ টাকা, ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫১৫ টাকা। কিন্তু টিসিবি বলছে- এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ৬০ টাকা এবং ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৪৫৫ টাকায় বিক্রি হয়।

জানতে চাইলে শনিরআখড়ার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, কে কোন মূল্য তালিকা প্রকাশ করল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা যে দামে কিনি তার ওপর নির্ভর করে বিক্রি করি। চিনি ও তেলের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়তি। তবে চলতি সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়েনি। দাম যা বাড়ার গত সপ্তাহেই বেড়েছে।

বার্তাবাজার/এইচ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর