চলনবিলের পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ শুটকি মাছ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

সিরাজগঞ্জের চলনবিলের দেশীয় মাছ থেকে উৎপাদন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ শুটকি এখন বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। সম্পন্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে রাসায়নিক মুক্তভাবে উৎপাদিত শত শত টন শুটকি মাছ বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আড়তে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত শুটকির একটি অংশ বিভিন্ন হাত ঘুড়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এতে বেকারত্ব দুর হবার সাথে সাথে গ্রামীণ বিলাঞ্চলের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শুটকি উৎপাদনকারিদের উৎসাহিত করতে এই কাজে কর্মরতদের দক্ষতা বাড়াতে আগামী দিনে ট্রেনিং ও ঋন প্রদানের প্রকল্প গ্রহন করার পরিকল্পনা করছে স্থানীয় মৎস্য অফিস।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরেই চলনবিল থেকে প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আহরন করা হয়। আহরিত মাছ বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রির পরেও ছোট আকারের প্রচুর পরিমান মাছ অবিক্রিত থেকে যায়। যা এক সময় নষ্ট হত অযত্নে -অবহেলায়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎ চলনবিলের উচ্ছিষ্ট এই মাছ দিয়ে শুরু হয়েছে শুটকি উৎপাদন।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া, মহিষলুটি, মান্নান নগর, উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর, পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে শত শত অস্থায়ী শুটকির চাতাল। প্রতিটি চাতালে শুটকি মাছ উৎপাদনের বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন করে নারী-পুরুষ শ্রমিক। শুটকি উৎপাদন শুরু হওয়ার পর এখানে কাজের সুবাদে দুর হয়েছে এদের বেকারত্ব।

চলনবিলের বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে প্রতিদিন প্রতিটি চাতালের জন্য গড়ে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ কেনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পুটি, রুপচাদা, টেংরা, খইসা, চেং, টাকি, গচই, বোয়াল প্রভুতি জাতের মাছ। প্রতিদিন কেনা মাছ দুইদিনে শুকিয়ে নীলফামারি, সৈয়দপুর ও ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রতি চাতালে উৎপাদিত শুটকি মাছ প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

শুটকি উৎপাদনে মাছ ক্রয়ের পর চাতালে কাজ করা শ্রমিকদের দিন হিসেবে মজুরি দেবার পরেও একেকটি চাতালে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে লাভ পাওয়া যায়। এই নগদ টাকার লেনদেনের কারনে বিলাঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটাই গতিশীল হয়ে উঠেছে।

একসময় দেশের বিভিন্ন বাজারে চলনবিল অঞ্চলের শুটকির চাহিদা কম থাকলেও এখানকার উৎপাদিত রাসায়নিকমুক্ত শুটকির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপি। ফলে বেড়েছে শুটকির চাহিদা ও বাজার। পুষ্টিবিদদের মতে তাজা মাছের চেয়ে এখানে উৎপাদিত শুটকিতে তিনগুন বেশি পুষ্টিগুন বিদ্যমান। ফলে বিভিন্ন হাত ঘুড়ে এই অঞ্চলে উৎপাদিত ভালোমানের শুটকি এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুরের শুকুর আলী, আব্দুল জলিল, সফিকুল ইসলাম, মনতাজ হোসেন, ধরইল গ্রামের আবু বক্কার সিদ্দিকীসহ একাধিক শুঁটকি উৎপাদনকারী বলেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা চাতাল স্থাপন করে শুঁটকির উৎপাদন শুরু করেন। জেলেদের জালে ধরা পড়ে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব মাছ জেলেদের কাছ থেকে ক্রয় করে শুরু হয় শুঁটকি উৎপাদনের প্রক্রিয়া। স্থানীয় নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা চাতালে কাজ করেন। এভাবে টানা ছয় মাস শুঁটকি উৎপাদন করেন তারা। এ অঞ্চলে চাতালে নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।

একই এলাকার শুটকি চাতালে কর্মরত নারী শ্রমিক মনিজা বেগম জানান, অসময়ে বিভিন্ন কাজ করি। বর্ষা মৌসুমে চলনবিলে কোন কাজ থাকে না। কিন্তু শুটকির চাতাল হওয়ার পর এখানে কাজ পাওয়ায় সারা বছরই আয় রোজগার হয়। সেই রোজগারে আমাদের সংসার ভালোই চলছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী জানান, চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশ ও উল্লাপাড়াতেই প্রায় ১৬০ থেকে ১৭৫ মন শুটকি উৎপাদন হয়। এটি অত্যান্ত লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর প্রসার হচ্ছে। এখানকার শুটকিতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার হয় না। ফলে এখানকার উৎপাদিত শুটকি অত্যান্ত সুস্বাদু হয়।

তিনি আরো বলেন, আগামীতে শুটকি উৎপাদনকারিদের প্রশিক্ষিত করতে ট্রেনিং দেওয়া ও ঝন সুবিধার ব্যাবস্থা করা হচ্ছেআশা করছি এতে চলনবিলে এই শিল্পটি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

বার্তাবাজার/এইচ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর