বাঁশের সাঁকো তৈরি করে টোল আদায়!

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়নের শত শত মানুষ প্রতিদিন ইসলামপুরের ভাঙা ব্রিজের পাশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বিভিন্ন রোডে যাতায়াত করে থাকে।

অথচ ওখানে সেতু না থাকায় ওই সব এলাকার ১০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই সুযোগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, আগে নৌকার মাধ্যমে এই এলাকার মানুষ নদী পারাপার হতেন। এখন কয়েকজন মিলে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। সেই সাঁকো দিয়েই দুই পাড়ের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন।

তবে এর জন্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে টোল দিতে হয়। টোল আদায়কারীদের মতে, এটা খেয়া পারাপারের টাকা। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর এলাকা।

সেই এলাকার স্থানীয়দের দেয়া ডংকা বিলের ভাঙা ব্রিজের পাশে দীর্ঘদিন নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার হতেন। সেই স্থানটি এখন ভাঙা ব্রিজের খেয়াঘাট হিসেবে পরিচিত।

ওই ঘাটের দুই পাশে ইসলামপুর, নাওজোর, কড্ডানান্দন ও কাশিমপুরের বারেন্ডা, এনায়েতপুর, বাগবাড়ি, নরসিংহপুর, সারদাগঞ্জ, হাতিমারা, ধনঞ্জয়খালি, নয়াপাড়া, নদীর পাড়সহ ১০টি এলাকা রয়েছে। বহু বছর আগে সেখানে একটি বক্সকালভার্ট ছিল।

সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর আর সেখানে ব্রিজ বা কালভার্ট করা হয়নি। ওই স্থানে দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মিত না হওয়ায় ওই এলাকাগুলোর প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় থেকে ইসলামপুরের দিকে একটি কার্পেটিং সড়ক ভাঙা ব্রিজ পর্যন্ত গিয়েছে। কিন্তু একপাশে কার্পেটিং করা সড়ক থাকলেও বাঁশের তৈরি সাঁকো পার হয়ে অপর পাড়ে গেলে আর কার্পেটিং নেই। সেখানে মাটির রাস্তা চলে গেছে কাশিমপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত।

স্থানীয় মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। তবে এর জন্য সেখানে জনপ্রতি ৫ টাকা করে টোল দিতে হচ্ছে। ওই টোলের টাকা নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিচ এন্টারপ্রাইজের মালিক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এক বছরের জন্য ওই খেয়াঘাট ইজারা নিয়েছেন।

কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা ও চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, কাশিমপুর থেকে কোনাবাড়ি হয়ে গাজীপুর যাতায়াত করা যায় কিন্তু সেদিক দিয়ে সময় লাগে অনেক বেশি। আর ইসলামপুর হয়ে গাজীপুর গেলে কম সময় লাগে। কিন্তু এখানে সাঁকোর জন্য জনপ্রতি ৫ টাকা দিতে হচ্ছে।

ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, সেখানে যে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা দিয়ে তো জনপ্রতিনিধিরাই এটি তৈরি করে দিতে পারত। মানুষকে হয়রানি না করে টাকা আদায় বন্ধ করা উচিত।

অটোচালক আব্দুল হাই বলেন, এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। তখন এলাকার মানুষদের কথা দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে একটি ব্রিজ করে দিবেন। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত ব্রিজ করার কোনো নাম নেই। উল্টো বাঁশের সাঁকো দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

ভাঙা ব্রিজের পাশের সাঁকো তৈরি করে টোল আদায়কারী রনি মিয়া বলেন, আগে সন্ধ্যা হলে এই পথে মানুষ চলাচল করত না। আমরা এখানে লাইটের ব্যবস্থা করেছি। এখন মানুষ চলাচল করছে। জনপ্রতি পারাপারের জন্য নেয়া হচ্ছে ৫ টাকা। এটি বেশি মনে হলেও আমরা তো সেবা দিয়েই নিচ্ছি।

ইজারাদার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে এক বছরের জন্য ঘাটটি ইজারা নেয়া হয়েছে। নৌকায় মানুষের সমস্যা হবে চিন্তা করে সেখানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। তবে এলাকার অন্য মানুষের মতো আমিও এখানে সেতু তৈরির দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোয়েব আল আসাদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর