পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পানোয়া ভ্রমন

জেফারসন্স এর বিখ্যাত উক্তি “ভ্রমণ মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে” এরই সূত্র ধরে জ্ঞানের ঝুলিকে সমৃদ্ধ করা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে ঘুরতে যাওয়া হল বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বা লে অবস্থিত পর্যটন শহর কক্সবাজারে।

যেখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত। আর সাথে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন।

ঘড়ির কাটায় যখন ৯:৩০ ছুঁই ছুঁই এমন সময় পালঙ্কির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হল। গন্তব্যপানে ছুটে চলার সাথে সাথে বাসগুলো পরিণত হয়েছিল রঙ্গমে , সকলে নাচে গানে ও আড্ডায় মেতে থাকা। এ যেন ব্রিল ব্রাইলসন এর বিখ্যাত উক্তির মত তিনি বলেন, “কোন দেশে গেলে মানুষ শিশু বয়সের বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি ফিরে পায়”।

রাতের আধার ছাপিয়ে যখন সকালের মৃদু শীতল বাতাসে ঘুম ভাঙ্গে, তখনও পাহাড়ের পথ ধরে বাসের ছুটে চলা। গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। আমাদের মত করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে একে একে করে সবাই বেরিয়ে পড়ে। ঘাট থেকে স্পিডবোটে মহেশখালীর উদ্দেশ্যে রওনা, সাগরের ঢেউয়ের মাঝে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাগর পথ পাড়ি দেওয়া।

বিশাল ঢেউ যখন স্পিডবোটে আঁছড়ে পড়ে সকলের মুখে ভয়ের ছাপ, পরক্ষণেই আনন্দে মেতে উঠা। অবশেষে পাহাড়ি দ্বীপে এসে স্পিডবোটের যাত্রা সমাপ্ত। পাহাড়ী দ্বীপে নেমে সকলের নজর কাড়ে দ্বীপের দুপাশে সাগর ঘেষে দৃষ্টিনন্দন গাছগাছালি। তাই তো ক্যামেরাবন্দি হতে কেউ বাকি রইল না। একে একে সুউচ্চু পাহাড়ে অবস্থিত আদিনাথ মন্দির, স্বর্ণ মন্দির, লবণ মাঠ ও শুটকি মহল ঘুরে দেখা। প্রত্যেকটি স্থাপনায় ফুটে উঠেছে এ অ লের নিজস্ব কৃষ্টি কালচার ও সমাজ ব্যবস্থা।

তাই তো প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “জোজো আদশর্” উপন্যাসে মহেশখালীর বর্ণনা দিয়েছেন। তিন লক্ষাধিক জনসংখ্যায় এই বসতিতে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে আয়োজন করা হয় আদিনাথ মেলা। মেলায় স্থানীয় লোকদের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠিত হয় নাটক,যাত্রা, পুতুল নাচ ও সার্কাস। সেদিনকার মত ভ্রমণ শেষ করে হোটেলে ফিরে আসা। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে বিশ্রাম শেষ করে আবার ছুটে চলি সাগর পানে উপভোগ করি সাগরের ঢেউ, সূর্যাস্তঅ সাগরের ঢেও উপভোগ্য, বিশালাকার ঢেউ কে উপেক্ষা করে তার মাঝে বেঁচে থাকার বৃথা চেষ্টা।

আর সাগর তীড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সুমিষ্ট গর্জন যা আকৃষ্ট করে প্রত্যেক দর্শনার্থীর হৃদয়।

এই দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তার অমিয় বাণী “আর তিনিই সে সত্তা যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত পেতে পার এবং তা থেকে অলংকারাদি বের করতে পার, যা তোমরা পরিধান করে থাক, আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে, তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষন করতে পার এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর”।

রাতে সবাই মিলে স্থানীয় খাবার খাওয়া, আর বন্ধুদের সাথে মিলে সাগরের সকল ধরনের ভাজা মাছ খাওয়া। পরের দিন বাসে করে সকলে মিলে রামুর উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। বাসের সমাপ্তি ঘটে স্বপ্নপুরী কমিউনিটি সেন্টার এর সামনে। দুপুরের খাবার শেষে ছুটে চলার রামু রাবার বাগানের উদ্দেশ্যে, সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাবার বাগানের পরিধি, চারা রোপণ থেকে শুরু করে রাবার শিট সংগ্রহ পর্যন্ত সকল কিছুর বর্ণনা দেন একে একে। আমাদের সুযোগ হয় রাবার কারখানার ঘুরে দেখার। পরের দিন যাত্রা পূর্ব খুরুলিয়া গ্রামের দিকে, উদ্দেশ্য সেখানকার কৃষকদের সাথে কথা বলা । তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা । তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের বিষয় বস্তু ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। কৃষকদের সাথে কথা বলে তাদের বর্তমান অবস্থা চাষাবাদ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন মতামত জানা যায়। তাদের অধিকাংশের কাছে আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া ধারণা নাই। তবে তারা কৃষি কে ভালবাসে, যতই লোকসান হোক তারা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। ইনানী বীচে পৌঁছে দেখা মেলে প্রবাল ও সাম্পানের। পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। ইনানি বীচ কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত। এখানের অপূর্ব দৃশ্যে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতে কেউ ভুলে নাই। এবারে যাত্রা হিমছড়ির উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গা বেয়ে তৈরি সিঁড়িতে করে পাহাড়ে উঠা। পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা মিলে আকাশ, সাগর ও পাহাড়ের অপূর্ব মেলবন্ধন । এর এক পাশে অবস্থিত সমুদ্র সৈকত অন্যপাশে সবুজ পাহাড়ের সারি। এখানে দেখা মেলে হিমছড়ির জলপ্রপাত যা দর্শনার্থীর প্রধান আকর্ষণ। এখানে রয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের স্থল। হিমছড়ি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অপরূপ দৃশ্য উপভোগের সাথে সাথে সূর্য নেমে সন্ধ্যা চলে আসে।

ভ্রমন শেষে মনে পরে যায় সেন্ট অগাস্টিনের বিখ্যাত উক্তি “পৃথিবী একটি বই যারা ভ্রমণ করে না তারা বইটি পড়তে পারে না”।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর