নতুন বছরে মেট্রোরেলে বসছে রেল ট্র্যাক

দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে চলেছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এমনটাই পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। আট কিলোমিটার উড়ালপথ তৈরির কাজ শেষ।

এই উড়ালপথে ২০২০ সালের শুরুতে নতুন বছরে রেল ট্র্যাক ও বৈদু্যতিক লাইনের জন্য পুল নির্মাণ শুরু হবে দিয়াবাড়ির ডিপো-সংলগ্ন থেকে। ১ জানুয়ারি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মেট্রোরেলের ট্র্যাক ও বৈদু্যতিক লাইনের পুল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন। মূলত এই রেল ট্র্যাকের ওপর দিয়েই ছুটে চলবে লাল-সবুজের রেল কোচ। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে অপারেশনে যাবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। রেল ট্র্যাকে বৈদু্যতিক ইঞ্জিনের পরিবহণ খরচ কম, তবে শুরুর দিকে স্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি। তাই অনেক বেশি যাত্রী চলে- এমন পথে বৈদু্যতিক ইঞ্জিন চালু করা লাভজনক।

এসব কথা মাথায় রেখেই মেট্রোরেলের ইঞ্জিন চলবে বিদু্যতে। বৈদু্যতিক ইঞ্জিনগুলোতে রেললাইনের ওপর খুঁটিতে স্থাপিত হয় তার অথবা রেললাইনের পাশে বা মধ্যে স্থাপিত বিদু্যৎবাহী রেলের মাধ্যমে বিদু্যৎ সরবরাহ করা হয়। এ জন্য দুই পাশে বৈদু্যতিক পুল বা খুঁটির কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপরই শুরু হবে ক্যাটেনারির কাজ। এটা মূলত বৈদু্যতিক পুলের মাঝ বরাবর চলে যাবে। ক্যাটেনারির মাধ্যমেই মেট্রোরেলের ইঞ্জিন বিদু্যৎ সংযোগ পাবে। মেট্রোরেল-৬ এলিভেটেড হওয়ার কারণে বৈদু্যতিক লাইনও ওপর দিয়ে যাবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএন সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলে চড়ানো হবে।

এটা মাথায় রেখেই রাতদিন সমানতালে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। মেট্রোরেল প্রকল্পের রেল ট্র্যাক ও বিদু্যতের লাইন বিদেশ থেকে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে অনেক আগে। নতুন বছরের শুরুতে মেট্রোরেলে নতুন কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারি রেল ট্র্যাক ও বৈদু্যতিক লাইনের পুল তৈরি করব। এই পুলের মাধ্যমে মেট্রোরেল ইঞ্জিন বিদু্যৎ সংযোগ পাবে। যত সময় গড়াচ্ছে, ততই নতুন নতুন কাজ যুক্ত হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পে।’ তিনি বলেন, ‘ভায়াডাক্ট নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। ফলে রেল ট্র্যাক ও বিদু্যতের লাইন বসানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।’

মেট্রোরেল-৬ রুটের দৈর্ঘ্যও বাড়ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত লিংক করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অতিরিক্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রুট বাড়তি নির্মাণ করা হবে। ফলে এমআরটি-৬ এর মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। বর্তমানে বাড়তি অংশের সার্ভে কাজ চলমান। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পলস্নবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাস্তার মাঝ বরাবর উড়ালপথে চলবে মেট্রোরেল। স্টেশন হবে প্রায় দোতলা সমান উঁচু আর দৈর্ঘ্য ১৮০ মিটার। দোতলা উচ্চতার স্টেশনের নিচতলায় হবে টিকিট ক্রয় ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। দুই পাশ থেকে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারবে এই স্টেশনে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালি জাতির কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্য ও ইসলামিক সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে স্টেশনগুলোতে। ১৬টির মধ্যে তিনটি আইকনিক স্টেশন হবে বাকিগুলো হবে সাধারণ। আইকনিক স্টেশনগুলো উত্তরা (দক্ষিণ), বিজয় সরণি ও মতিঝিলে। এসব স্টেশন এমনভাবে নির্মিত হবে যেন, দেখেই বোঝা যায় এটা বাংলাদেশের মেট্রোরেল স্টেশন। দেশের গরম আবহাওয়া ও ভৌগলিক বিষয়ও স্থান পাবে স্টেশনগুলোতে।

প্রতিটি স্টেশন হবে আধুনিক ও বিলাসবহুল। প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহণে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর