আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সামনে নানা চ্যালেঞ্জ

গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সভাপতি সম্পাদক পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের পুণরায় বহাল আছেন। ইতোমধ্যে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেছেন।

সদ্য ঘোষিত এই নতুন কমিটিকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। একদিকে মোকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অন্যদিকে এগিয়ে নিতে হবে সরকারকে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে এসব কথা জানান দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেন, অতীতের মতো এবারও অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে নতুন কমিটিকে। বিশেষ করে দলের অভ্যন্তরে যেসব দলের আদর্শ বিচ্যুত হাইব্রিড লোকজন ঘাপটি মেরে আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বিগত ১০ বছরে অনেকে দুর্নীতিতে গা ভাসিয়েছেন। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবি।

কাউন্সিলের আগে দলের ভেতর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল।

অনেকে মনে করেন তা এখন থেমে গেছে। এই শুদ্ধি অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখতে হবে তা-ই নয়, এর আওতায় দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে আনতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নেতারা জানান, নতুন কমিটিকে এই কাজ করার ঝুঁকি নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে তাকে সহায়তা করা নতুন কমিটির প্রত্যেক সদস্যের কর্তব্য। কমিটিকে মনে রাখতে হবে, তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ একটি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পূর্ণাঙ্গভাবে শামিল হবে এবং একই বছর বাংলাদেশ তার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে। নতুন কমিটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রথমবারের মতো সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। এখানে যারা যোগ্য ও শ্রম দিতে পারেন দলের নেতৃত্বে কেবল তাদেরই আনা হয়। দলটি সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছে। এবারও যাবে।

তিনি বলেন, সময়ের দাবি অনুযায়ী এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন অব্যাহত রাখা। এদিকে ৭টি পদ খালি রেখে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ৩২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২১ ডিসেম্বর কমিটির ৪২ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি রয়েছে- একটি সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক, ধর্ম সম্পাদক ও তিনটি সদস্য পদ। এ পর্যন্ত ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ কমিটির যে ৩২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেন-সাংগঠনিক সম্পাদক-আফজাল হোসেন, শফিউল আলম নাদেল, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক-বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, তথ্য গবেষণা সম্পাদক: ড. সেলিম মাহমুদ, শ্রম ও জনশক্তি-হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপদপ্তর সম্পাদক-সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক-আমিনুল ইসলাম।

সদস্য হয়েছেন-আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ খ ম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বদরুদ্দিন কামরান, দীপংকর তালুকদার, আমিনুল আলম মিলন, আখতার জাহান মুশফিক, রিয়াজুল কবির কাওসার, মেরিনা জামান কবিতা, পারভেজ জামান, হুসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সফুরা খাতুন, সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানি চিনু,মারুফা আক্তার পপি,রেমন্ড আরেং ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। এর আগে ২১ ডিসেম্বর নির্বাচিত ৪২ জন হলেন- সভাপতি-শেখ হাসিনা, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য- সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং শাজাহান খান। বাকিরা সবাই আগের কমিটিতে ছিলেন। কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। তারা হলেন সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাহারা খাতুন, মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মান্নান, আবদুল মতিন খসরু। সাধারণ সম্পাদক-ওবায়দুল কাদের,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম।

দপ্তর সম্পাদক- ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক- আবদুস সোবহান গোলাপ। সাংগঠনিক সম্পাদক- এস এম কামাল,মির্জা আজম, আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল ও আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন। সম্পাদক পদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ স্বপদে বহাল আছেন। আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু পদোন্নতি পেয়ে এ পদে এসেছেন। আগের কমিটিতে সদস্য ছিলেন তিনি। কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন ফরিদুন্নাহার লাইলী। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন সুজিত রায় নন্দী। বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন দেলোয়ার হোসেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। নতুন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মেহের আফরোজ চুমকি।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বহাল আছেন হারুন অর রশীদ। শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন শামসুন নাহার চাঁপা। সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল আছেন অসীম কুমার উকিল। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. রোকেয়া সুলতানা। ঘোষিত কমিটিতে রাখা হয়নি অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে। পাশাপাশি বিগত কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, খায়রুজ্জামান লিটন, সিমিন হোসেন রিমি, বেগম মুন্নজান সুফিয়ান, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও আজমত উল্লাহ খানকে।

বার্তা বাজার/ডব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর