আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাদেল, উপেক্ষিত সুলতান

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন কুলাউড়ার কৃতি সন্তান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাদেলের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হবার পর মূহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় নাদেলের ছবি। দেশে বিদেশসহ তার নিজ জন্মমাটি কুলাউড়া শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।

আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের পর এবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সন্তান হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে স্থান পেয়ে চমক সৃষ্টি করলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কারপন্থীর তকমা লাগিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন সুলতান মনসুর। এরপর থেকে একের পর এক ডিগবাজীর রাজনীতি করেও শেষতক দলে ঠাঁই হয়নি তার।

শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুলতানী সাম্রাজ্যের পথে শেষ পেরেক মারা হলো বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন। শফিউল আলম নাদেল ছাত্র জীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি একাধারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক থেকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিগত ৫ ডিসেম্বরের কাউন্সিলে তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। এক প্রতিক্রিয়ায় শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, জীবনে কখনো ভাবিনি আমার আদর্শের ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসবো।

আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী, দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো তৃণমূলের একজন নগণ্য কর্মীকে যে মূল্যায়ন করেছেন তাতে আমি উচ্ছ্বসিত, উজ্জীবিত। মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দর্শন বাস্তবায়নই আমার অঙ্গীকার। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্তৃত্ব নয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সংগঠনকে বিকশিত করবো ইনশাআল্লাহ। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

এদিকে সুলতান মনসুর এক সময় ডাকসুর ভিপি ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থীর তকমা গায়ে লাগিয়ে দল থেকে বাদ পড়েন। সেই থেকে দলছুট হয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে তিনি টিভি টকশো, বিভিন্ন স্থানে ঐক্যফ্রন্টের জনসভা ও সর্বশেষ কুলাউড়া ডাকবাংলো মাঠে ধানের শীষের জনসভায় আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন।

এক সময় তিনি বিএনপির প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি দাবি করে গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুংকার দিয়ে বলেন, মাত্র দুই কোটি টাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি জীর্ণ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা কারাগার না, কারাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই খালেদা জিয়াও একদিন বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। সরকার ও সরকার প্রধানের প্রতি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।

তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেন। কিন্তু গিত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনের পর সুর পাল্টান তিনি। এখন সংসদ কিংবা টিভি টকশো এমনকি নিজ সংসদীয় আসনে বক্তব্যের সময় বিএনপির খালেদা জিয়ার নাম একটি বারও উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি।

নির্বাচিত হলেও বিএনপির নেতৃত্ব না মেনে ফের ডিগবাজি করে ঐক্যফ্রন্টের মতামতকে তোয়াক্কা না করে ৭ মার্চ শপথ গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার গুণগানে পঞ্চমুখ হলেও ফিরতে পারেননি দলে। গণফোরাম নেতা হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও সংসদে ফেরা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন সুলতান মনসুর। সাংসদ হলেও তিনি এখন দলীয় রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে প্রথম সারিতে বসে থাকতে দেখা গেলেও দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি কাড়তে পারেননি তিনি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এখন তিনি অনেকটা হ-য-ব-র-ল। প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের কাউন্সিল অধিবেশনে ৯ম বারের মতো শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর