তাজমহলে নয়, প্রেমপত্র ফুঁটিয়েছেন ফসলের মাঠে

পাঁচ বছর প্রেমের পর নিজের প্রেয়সীকে ঘরে এনেছেন কাদির। প্রেমের নিদর্শন সরূপ সম্রাট শাহজাহানের মতো তাজমহল তৈরির সামর্থ নেই তার। কিন্তু ভালোবাসার কমতি নেই তার ভেতরে। প্রেমের নিদর্শন হিসেবে প্রেয়সীকে লেখা চিঠির মতোই নিজের জমিতে প্রেমপত্র এঁকেছেন তিনি। সরিষা চাষ করে শৈল্পিক ভাবে জমিকে এক চিঠিতে রূপ দিয়েছেন। তার সৃষ্টি ব্যতিক্রমি সৌন্দর্য দেখতে ভীড় করে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কৃষক কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে।

উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াখলাবলা গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে আবদুল কাদির (৪০)। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। প ম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজেদের শ্রমিকের সংকট থাকায় আবদুল কাদির নিজেদের জমিতে কাজ শুরু করেন। পরে আর পড়ালেখা হয়নি তার। মাঠেই দিন রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান। বয়সকালে প্রেমে পড়েন পাশের সোহাগী ইউনিয়নের একটি গ্রামের মেয়ে মোকসুদা আক্তারের। মোকসুদার ভালোবাসা পাবার জন্য অনেক চেষ্টার পেয়েও যান ভালোবাসা। নিজেদের আবেগ বিনিময় করতেন চিঠির মাধ্যমে। চিঠির মাঝ খানে একটি বড় লাভ, চার দিকে চারটি লাখ এঁকে তার মাঝের লাভের ভেতরে লিখতেন দু’জনের নাম। ভালোবাসার সেই চিঠির আদলে নিজের জমিতে চিঠি ফুঁটিয়ে তোলেছেন তিনি।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ৩৫ শদক জমিতে সরিষা চাষ করেন তিনি। বারি সরিষা-১৫ এবং ১৫ জাতের সরিষা দিয়ে তিনি প্রেম পত্রের মতো মাঝ খানে একটি বড় লাভ তার ভেতরে নিজের নাম, চার পাশে চারটি লাভ একে পুরু মাঠটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছেন। ফসল দিয়ে তার ওই বৈত্রিময় চিঠি সকলের কাছে দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠে। কৃষক কাদিরের সৃষ্টি দেখতে ভীড় শুরু করেছেন আশপাশের এলাকার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার নিপূন হাতের সৌন্দর্য।

কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ভালোবেসে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরি করেছেন। তার সেই সামর্থ নেই। ছোট বেলায় পড়ালেখা ছেড়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। কিন্তু নিজের মনের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। নিজের প্রেমের বহি:প্রকাশ ঘটাতে স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি সরিষা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চিঠিটি তৈরি করেছেন। তার চিঠিতে নিজের নাম, চার কোনো চারটি লাভ, মাঝখানে বড় একটি লাভ, একটি শাপলা ফুল ও দুটি নৌকা এঁকেছেন। প্রতিদিন তা দেখতে ভীড় করে নানা এলাকার মানুষ। তিনি বলেন, সমাজে কলহ, দ্বন্দ্ব সব সময় লেগে লাগে। তরুণ সমাজ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। যাদের মনে প্রেম আছে তারা কখনও সহিংস হয়না। অহিংসের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তিনি মাঠে প্রেমপত্র ফুঁটিয়েছেন।

কাদিরের বাবা তারা মিয়া বলেন, ছেলেকে বেশি পড়ালেখা করাতে পারিনি। ফসলের মাঠে সে সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে তার ছেলে তা দেখতে সবাই ভীড় করছে। এতে নিজের কাছে ভালো লাগছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, কৃষক আবদুল কাদির মানসিক সৌন্দর্যের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন নিজের ফসলের মাঠে। তার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

বার্তা বাজার/ডব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর