প্রথম আলো’র প্রতিনিধির দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক পিকলু আটক

টেকনাফ প্রথম আলো প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দীনের দায়ের করা মামলায় সংবাদিক পিকলু দত্ত আটক। এটি টেকনাফে কোন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে দায়ের হওয়া প্রথম মামলা। যার ডিজিটাল আইনে মামলা (নং-৮৫/১১১৫)।

গত ২৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরদিন ২৫ ডিসেম্বর টেকনাফ থানায় উক্ত মামলা রেকর্ড করা হলে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কায়ুকখালী পাড়া বাসভবনের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক সাব্বির আহমদ মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


ছবিগুলোকে কেন্দ্র করে মামলা। ছবি- বার্তা বাজার

জানা যায়, সম্প্রতি ইয়াছিন আরফাত নামে রঙ্গিখালী এলাকার এক যুবককে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইয়াবা গডফাদার নুর ফয়েজের সহযোগী হিসাবে ইয়াবা, অস্ত্র ও হত্যা মামলায় আটক করে পুলিশ।

আটকের ঘটনায় বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইয়াছিন আরফাতকে টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটি নামে একটি সংগঠনের সদস্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর কয়েকদিন পর সাংবাদিক ইউনিটি এক বিবৃতিতে ইয়াছিন আরফাতকে তাদের সদস্য নয় বলে বিবৃতি প্রদান করে।

উক্ত বিবৃতি ও মিথ্যাচারের বিপক্ষে তরুণ সংবাদকর্মী পিকলু দত্ত সাংবাদিক ইউনিটির উপদেষ্টা গিয়াস উদ্দিনসহ সংগঠনটির সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ বিভিন্ন সদস্যদের সাথে ইয়াছিন আরাফাতের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি এবং ইউনিটির সদস্য হিসাবে নিউজের স্ক্রীন শর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিয়ে ইয়াছিন আরফাতকে ইউনিটির সদস্য হিসাবে প্রমানের চেষ্টা করেন।

এতে গিয়াস উদ্দিনের সাথে ইয়াছিন আরফাতের প্রদত্ত ছবিটি প্রদান করায় তার সামাজিক মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং লজ্জায় কোথাও মুখ দেখাতে পারছেনা বলে দাবী করে মামলাটি দায়ের করেন গিয়াস উদ্দিন।

এব্যাপারে শিক্ষানবিশ তরুন সংবাদকর্মী পিকলু দত্তের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, ইয়াছিন আরাফাত নামে যুবকটি সাংবাদিক ইউনিটির একজন সদস্য হিসাবে তাদের প্রতি কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করে আসছিল।

পরে আটক হলে তাকে তাদের সদস্য নয় বলে বিবৃতি দেয়। উক্ত বিবৃতি যে মিথ্যা তা প্রমানের জন্য আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের টাইমলাইন থেকে ছবি সংগ্রহ করে আমার টাইমলাইনে দিয়েছি। এসব ছবির আমিই প্রথম প্রকাশ করিনি। আগে থেকেই সেসব ছবি ফেইসবুকে ছিল।

মামলার উক্ত ছবিটি সহ ইয়াছিন আরাফাতের সাথে গিয়াস উদ্দিনের আরো অন্তরঙ্গ ছবি ইয়াছিন আরাফাতের ফেইসবুকের টাইমলাইনে প্রদর্শিত হচ্ছে। এমনকি গিয়াস উদ্দিনের ফেইসবুক টাইমলাইনেও ইয়াছিন আরফাতের সাথে ছবি রয়েছে। আগে থেকে যেসব ছবি ফেইসবুকে রয়েছে তা দিয়ে কিভাবে মানহানি হয় তা বোধগম্য নয়।

এছাড়া ইয়াছিন আরাফাত ছাড়াও ইয়াবা গডফাদার বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল করিমের ভাই রাশেদুল করিম সহ ইউনিটির আরো ৩ সদস্য ইতিপূর্বে ইয়াবা মামলায় আটক হয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি। যে সংগঠনটির উপদেষ্টা প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন।

পিকলু দত্ত আরো বলেন সত্য প্রকাশ করে যদি মামলা ও জেল জুলুমের শিকার হতে হয় তাহলে আমি জেল খাটতে রাজী আছি তবুও সত্য প্রকাশে পিছপা হবো না। এব্যাপারে গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোনে (০১৭১৪৯৯১১৮৪) সংযোগ না দেওয়ায় বক্তব্য জানা যায় নি।

প্রসঙ্গত তরুণ সংবাদকর্মী পিকলু দত্ত টেকনাফ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে সাংবাদিকতার পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিডিটাল সেন্টারের উদ্যোক্ত হিসাবে টেকনাফ সদর ইউপিতে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে শিক্ষানবিশ সংবাদকর্মী হিসাবে কর্মরত।

জানা গেছে, পিকলু দত্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে রাতারাতি গজিয়ে উঠা তৈলবাজ, হাইব্রিড ও সুবিধাবাদী একটি মহল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল তাকে মামলা হামলায় জড়ানোর জন্য।

অবশেষে সেই মহলটির জয় হলো বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সচেতন মহলের মতে আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদসহ সংশ্লিষ্টরা ডিজিটাল আইনে সাংবাদিকদের হয়রানী না করতে নির্দেশনা দিলেও ডিজিটাল আইনে উক্ত মামলার দায়ের পরবর্তী আটকের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে সচেতন মহলে। এর ফলে আর কেউ সত্য প্রকাশে সাহসী হবেন না বলে মনে করছেন তারা।

এবিষয়ে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক নেতা আবুল কালাম আজাদ জানান- যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিগুলো পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিলো সুতরাং নতুন ভাবে ছবি আপলোড করা একটা নগন্য বাপার মাত্র। এটাকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি কিছুতেই বোধগম্য নয়।তাছাড়া সাংবাদিকদের মধ্যে কোন্দল থাকতে পারে, তবে তুচ্ছ বিষয়ে কেন্দ্র করে আইন আদালত গড়ানো অশুভ বলে মনে করি।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর