চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকাগুলো মাদকদ্রব্যের আনাগোনা

অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা, সুনসান। দু’দিকে বিশাল বিশাল গাছ। থমথমে পরিবেশ। তারই মধ্যে দিয়ে কেউ চলেছেন সাইকেল নিয়ে। কেউ গুটগুট করে হাঁটছেন। আলো বলতে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইট টুকুই।

রাতের চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত এলাকার সড়কগুলোর পরিস্থিতি এমনই। রাস্তায় ঠিকমতো আলো না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাতে ওইসব সড়কে দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও চলে।

পাচারকারীদের ঘোরাফেরাও চোখে পড়ে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশের দেখা মেলে না বললেই চলে, এমনই অভিজ্ঞতা রাস্তার দু’পাশের বসত এলাকার মানুষের। নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইক, ‘প্রেস’ লেখা উটকো গাড়িও যাতায়াত করে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, কুড়ুলগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, সারাবাড়ী, নাস্তিপুর, বাড়াদী, কামাড়পাড়া, ফুলবাড়ী পর্যন্ত একইচিত্র। রাস্তার হাল খতিয়ে দেখতে চিত্র সাংবাদিক সাইদুর রহমানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম ওই রাস্তার ধরে।

রাত ১২ টা নাগাদ দর্শনার বড় বাজারে দেখা গেল, একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। চালকের পাশে বসে ঢুলছেন এক পুলিশ কর্মী। পাশ দিয়ে নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইকে দুই যুবক হুঁশ করে চলে গেল। কেউ নজর করার নেই। এই চত্বরেই গ্রামীণ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর। সেখানেও নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।

এরপর দর্শনা হল্টস্টেশন দিকে আসার পথে দেখলাম কিছু জায়গায় বাঁতি আলো জ্বলছে। কিছু ব্যাচেলার পোলাপাইন একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে। কয়েকজন যাত্রীশেডের তলায় গুলতানি করছেন। স্টেশন বাজারের বেশির ভাগ অংশ অন্ধকারে ডুবে। পাশে কয়েকটি হাসাপাতাল দেখতে পেলাম। সেখানে দেখলাম তেমন কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।

এবার এলাম দর্শনা কাঁচাপট্টি ভিসিপি বাজারে। ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় একটা। ২ জন নাইটগার্ড ঘুরছিলেন রাস্তায়। আমাদের দেখে তাঁরা এগিয়ে এলেন। পরিচয় দেওয়ার পরে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল না।

খানিকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখলাম কাঁচাপট্টির পাশে রেল লাইনের ধারে কয়েকজন কত্তামাশাই বাংলা মদের হিসাব নিকাশ করছেন। আবার কেউ মাল খেয়ে বেতাল হয়ে ঢুলছেন।

শুধু তাইনই এখানে নাকি দিদিদের ও আনাগোনা মেলে। দাদারা নাকি দিদিদের ভাড়া করে আনে। স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশগুলো কি রাতে নাক ডেকে ঘুমায় নাকি? এগুলো কি স্যার মশাইদের চোখে পড়ে না।

একদিন মোটর বাইকে চরে রাত সাড়ে এগাড়োটা নাগাদ কুড়ুলগাছি বাজারে গেলাম দেখা গেল কোন আলো নেই। গা ছমছমে পরিবেশ। দোকানপাট বন্ধ। নৈশ প্রহরী পর্যন্ত চোখে পড়লো না। দু’একটি শিয়াল চকিতে লেজ দেখিয়ে সটকে পড়লো।

এখানে নাকি আগে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার কেউ নেই। তারপর চলে গেলাম কার্পাসডাঙ্গা বাজার এলাকায়। তখন রাত প্রায় অনেক। চারিদিকে সুনসান।

কয়েকজন পুলিশ দেখলাম টহল দিচ্ছে। তবে রেগুলার পুলিশি টহল চোখে পড়ে না। এই এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও থাকে বলে জানাগেছে। অতীতে খুন-অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে নিরাপত্তা জোরদার নয় বলেই এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অথচ, কার্পাসডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্তবর্তী এলাকাটা একদিন রাতে দেখতে গেলাম। চারিদিকে অন্ধকার কয়েকটা পুলে বাঁতি জ্বলছে। রাস্তায় দেখলাম ডর্জন খানিক কুকুরের চেলাচেলি। আমাদের দেখে কয়েকটা কুকুর এগিয়ে এলে ছেই ছেই করতে ওখান থেকে কেটে পড়লাম।

সামনে গিয়ে দেখি কাস্টমস চেকপোষ্ট। আবার নাকি দিনের বেলায় কাস্টমসে দালালদের হাতা হাতি সেই রকম চলে। “আসেন আপা আপনার বইটা দেন স্যারের কাছে নিয়ে যাই” এটা হলো দালালদের ধান্দার ভাষা। তবে এই কাস্টমসে দালালি নাকি কখনো বন্ধ হয়না।

দালালদের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু কতিপয় সদস্যের হাত আছে। তাদের মাধ্যমে নাকি দালালি পরিচালনা হয় এবং কাঁচা পয়সা কামায়। লিখতে লিখতে অনেক কিছু লিখে ফেললাম। আবার পরবর্তী অনুসন্ধানে বাকি কথাগুলো তুলে ধরবো।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর