প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে আজ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৯ ফাঁকা পদে স্থান পেতে প্রতীক্ষায় আছেন অনেক নেতা। এর মধ্যে নতুন, পুরনো নেতারা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আশায় বুক বেঁধে আছেন বাদ পড়া নেতারাও। তাদের প্রত্যাশা ফাঁকা পদের যেকোনো একটিতে হয়তো স্থান পাওয়া যাবে।

তাই শেষবারের মতো চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল রাত পর্যন্ত অনেক নেতাকে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি অফিস, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও গণভবনে যাতায়াত করতে। আবার অনেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।

তবে ফাঁকা পদে স্থান পাচ্ছেন কিনা এর নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কোন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা জানান, সভাপতিমন্ডলির বৈঠকে এসব পদে নেতা নির্বাচনের সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরে ওই তালিকা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবেন ওবায়দুল কাদের। আর এর মধ্য দিয়েই অবসান হতে যাচ্ছে নেতাদের প্রতীক্ষার। রেওয়াজ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলের পর প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদে নেতা মনোনীত করার বিধান আছে।

গঠনতন্ত্রের ১৯ ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারায় বর্ণিত কার্যনির্বাহী সংসদের ২৮ জন সদস্য সভাপতিমন্ডলীর সহিত আলোচনাক্রমে মনোনয়ন দান করিবেন এবং উক্ত মনোনয়ন কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে ঘোষিত হইবে।

মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

ঘোষণার পর নতুন বছরে ৩ জানুয়ারি নতুন কমিটির সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। টুঙ্গিপাড়ায় একটি যৌথসভা হবে বলেও জানান তিনি।

গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেষ দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল পর্বে টানা নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

ওইদিনই ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৪২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি রয়েছে ৩৯ পদ। এর মধ্যে সম্পাদকমন্ডলীর ১০টি, কোষাধ্যাক্ষের ১টি ও নির্বাহী কমিটির ২৮টি পদ রয়েছে। এই পদগুলোতে স্থান পাওয়ার আশায় রয়েছেন বাদপড়া নেতারা।

আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে ৪০ পদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১১টি পদ। উপদেষ্টামন্ডলীতে স্থান পেতে বাদপড়া সিনিয়র নেতারা নানাভাবে দেনদরবার করছেন। অনেকে এটিকে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নিয়েছেন।

কাউন্সিলে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য, শ্রম, ধর্ম এবং তথ্য ও গবেষণা এই পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের পদ ঘোষণা করা হয়নি। এসব পদে নতুন মুখ আসার কথা শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জেলা পর্যায়ের কিছু ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকে সব সময়ই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

বিশেষ করে যেসব জেলা নেতার দলে ভূমিকা আছে, কিন্তু মন্ত্রী, এমপি করা সম্ভব হয়নি। এবারও তাদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। এদিকে প্রেসিডিয়ামে কোনো পরিবর্তন না এলেও এ পর্যন্ত যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে নেই আগের কার্যনির্বাহী সংসদের ১০ প্রভাবশালী নেতার নাম।

তাদের মধ্যে সাতজনই মন্ত্রিসভার সদস্য। তারা হলেন-বিদায়ী কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আইনবিষয়ক সম্পাদক ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এবং ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

এছাড়া বিদায়ী উপদেষ্টা পরিষদের দু’জনের নাম ঘোষণায় আসেনি। তারা হলেন- মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। যদিও উপদেষ্টা পরিষদের ১১টি পদ এখনও খালি আছে।

দলের নেতারা জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীকে রাখা হবে না। কারণ সাংগঠনিক পদে যারা দায়িত্ব পান, তাদের সারা দেশ চষে বেড়াতে হয়। মন্ত্রিত্বের গুরুদায়িত্ব পালনের পর এই পদে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা। এ নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।

এদিকে আলোচনা থাকলেও এবারও শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসছেন না বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য কোনো সদস্য। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, শেখ রেহানা, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয়- কেউই এখনই রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন। শেখ পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতিতে আসবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর