ধানের পর আগাম আলুতেও লোকসান কৃষকদের

লাভের আশায় আগাম জাতের আলু চাষ করে দাম কম পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের বেশিরভাগ আলুচাষিরা। আলু চাষ করতে বেশি খরচ হওয়ায় এবং বাজারে পুরোনো আলুর সরবরাহ থাকায় নতুন আলুর দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এমনটাই দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দিনাজপুরের বিভিন্ন জমি আলু চাষের জন্য উর্বর হওয়ায় প্রতিবছর এই জেলায় আগাম ও নমলাজাতের আলুর চাষ করে অনেকেই লাভবান হন। কিন্তু এ বছর নতুন আলুর দাম কম থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে আলু চাষিদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪০ হাজার ৬৪ হেক্টর জমি। তবে আগাম জাতের আলু কত হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে সেই তথ্য দিতে পারেনি কৃষি অধিদপ্তর।

আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকার হাবিবুর রহমান (৩২)। তিনি বলেন, ‘আমি এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ঢাকাইয়া আলু চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৮০ কেজির বস্তায় আলু হয় ৪০ থেকে ৫০ বস্তা। প্রতিবস্তা আলুর দাম ৮০০ হাজার থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার তিন বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু আগাম আলু তুলে ওই পরিমান টাকায় বিক্রি করতে পারছি না। এবার ধানেও লোকসান গুনেছি এখন আলুতেও লোকসান গুনতে হচ্ছে।

খানসামা উপজেলার ভান্ডারদহ গ্রামের আলু চাষী মাইজার ইসলাম (৪৯) বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। গতবার আগাম আলুর দাম বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু এবার বাজারে পুরোনো আলু থাকায় নতুন আলু প্রতি কেজি ১৫ থেকে ১৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি আলু ফলাতেই খরচ পরে ১৫ টাকার বেশি। আগাম আলুর ফলন কম হয় আবার দামও যদি কম হয় তাহলে লোকসান হবেই।

খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সামাদ (৫০) দেড় বিঘা, রফিকুল ইসলাম (৫৫) পাঁচ বিঘা ও শহিদুল ইসলাম (৫০) ৩ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। বাজার মন্দার কারণে তাঁরাও সবাই হতাশ। তাঁরা বলেন, এবার বাজার এতটাই খারাপ যে গতবার যেই আলু এই সময় ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি সেই আলু বর্তমান সময়ে ১৫ টাকা বা তারও কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য বছর এ সময়ে বাইরের ব্যবসায়ীরা এলাকায় এসে আলু নিয়ে যেতেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু এবার বাজার মন্দার কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসছেন না। তাই এলাকার ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। ওই দামে আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না।

দিনাজপুরের আগাম আলু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। কিন্তু এবার শীত আর আবহাওয়া খারাপ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরাও আসছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে ব্যবসায়ী। বাহাদুর বাজারের আলু ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান (৩৫) বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর নতুন আলু ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাই। ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের আগে থেকেই কথা থাকে কত ট্রাক আলু নিয়ে যাব। কিন্তু এবার তেমন ব্যবসায়ী পাইনি। তাই বাইরে খুব একটা আলুও নিয়ে যেতে পারিনি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘কৃষকেরা প্রথমে প্রতি কেজি আলু ৩০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগাম আলু ওঠায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, এ কারণে দাম কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া বাজারে পুরোনো আলু রয়েছে। এবছর কৃষকরা আলুর বীজ বেশি দরে কেনার জন্য খরচ বেশি হয়েছে। তবে আলুর দামটা আরেকটু বেশি থাকলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়ত না।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর