ঘাটাইলে কাজ না করেই প্রকল্পের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এনামুল হকের বিরুদ্ধে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ না করে এ লুটপাট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির নামে ফী বছরের শেষ পর্যায়ে বরাদ্দের ২৩৯.৮৫৩ মে. টন খাদ্যশস্য বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কাজ দেখিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (শেষ পর্যায়) গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্যের মোট বরাদ্দ ছিল ২৩৯.৮৫৩ মে. টন। এর মধ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির সাধারণ বরাদ্দ ৯২.৪৬৭ মে. টন। আর নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক বরাদ্দ ছিল ১৪৭.৩৮৬ মে. টন খাদ্যশস্য। এর মধ্যে ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৮টি প্রকল্পের নামে প্রাক্কলন ব্যয় দেখানো হয় ১২৭.০০ মে. টন। বাকি ১১২.৮৫৩ মে. টনের কোনো প্রকল্পই দেখাতে পারেননি পিআইও এনামুল হক। বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কাগজে কলমে প্রকল্প থাকলেও সরেজমিনে ওইসব প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি।

এলাকাবাসী জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পগুলোতে বেশি লুটপাট হয়। এ প্রকল্পে শ্রমিক না খাটিয়েই মেম্বার চেয়ারম্যানরা টাকা উত্তোলন করে থাকেন। কাবিটা, কর্মসৃজন, টিআর প্রভৃতি প্রকল্পে মাঝে মধ্যে কিছু কাজ করতে দেখা যায় বলে তারা জানান।

উপজেলার ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের ‘নিয়ামতপুর বাবর খার বাড়ি থেকে আজগরখার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ’ প্রকল্পে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় ৮ মে. টন। সাবেক এক ইউপি মেম্বার জানান, এ রাস্তায় কাবিখার কোনো কাজই হয়নি। ৪০ দিন কর্মসূচির শ্রমিকরা কিছু কাজ করেছে। এ ইউনিয়নে প্রকল্পের নামে অনেক বরাদ্দ আসে। কিন্তু প্রকল্পগুলো কাগজে কলমেই থাকে।

‘শংকরপুর মোড় থেকে নড়জনা রাস্তা পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ প্রকল্প’ নামে প্রাক্কলন দেখানো হয় ৮ মে. টন খাদ্যশস্য। এলাকাবাসী জানান, এ প্রকল্পে তেমন কাজ হয়নি।

একইভাবে সাগরদীঘি ইউনিয়নের ‘তমালতলা থেকে রাধানগর হয়ে সৈয়দপুর সীমানা পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ’ নামে প্রাক্কলিত ৮ মে. টন প্রকল্পেও কোনো কাজ হয়নি বলে স্থানীয় জাহাঙ্গীর হোসেন জানান।

পিআইও এনামুল হক বলেন, সব প্রকল্পেই কাজ হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী এসব ব্যাপারে বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রত্যেক প্রকল্পেই কাজ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২৩৯.৮৫৩ মে. টন খাদ্যশস্যের মধ্যে ১২৭.০০ টনের বিপরীতে ১৮টি প্রকল্প তালিকা করা হয়েছে। এ বরাদ্দের মেয়াদ ছিল গতবছরে তা জুন পর্যন্ত। ফলে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগসাজশে তড়ি-ঘড়ি করে মাস্টার রোল তৈরি করে ডিও কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। এতে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পিআইও অফিসের মাধ্যমে যে বরাদ্দ আসে তার সঠিক ব্যবহার হলে এক বছরের মধ্যে এলাকার রাস্তা-ঘাটে মাটির কোনো কাজ থাকবে না। অথচ বরাদ্দের সিকি পরিমাণ কাজও হয় না।

উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ২ বছর ধরে আমি অসুস্থ থাকায় প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে পারি নাই। এ সময়ের মধ্যেই দুর্নীতি বেশি হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এ আসনের এমপি অনুপস্থিতির সুযোগে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ কাজগুলো করেছে পিআইও আর ইউএনও মিলে।

পিআইও’র এ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের দাবি স্থানীয়দের।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর