একই স্থানে দীর্ঘকাল থাকছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা

সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি না। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ঢাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে চার সহস্রাধিক পুলিশ। নানা সমস্যা, সংকট নিয়েই সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

জনবল স্বল্পতার কারণে দীর্ঘ সময় ডিউটি করতে হয়। নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নেও বেগ পেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের। এরমধ্যেই দিন দিন একটি বিষয় প্রকট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। রহস্যময় কারণে কোনো কোনো কর্মস্থলে দিনের পর দিন থাকছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা।

পুলিশ সূত্র জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় পুলিশের কোনো সদস্যই কোনো একটি ইউনিটে দুই বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না উল্লেখ থাকলেও কিছু কর্মস্থলের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।

সূত্র বলছে, সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) ও সার্জেন্টরা সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের ম্যানেজ করে তিন থেকে সাত বছর ধরে একই ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ কেউ তারও বেশি।

পুলিশেরই একটি মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একই ইউনিটে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তাদের তদবিরের পেছনে কি স্বার্থ রয়েছে? সূত্রমতে, ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্য গণপরিবহণে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িত রয়েছেন।

এসব কারণেই সুবিধাজনক স্থানে বছরের পর বছর থাকতে নানাভাবে তদবির করেন তারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই সড়ক কেন্দ্রিক পুলিশের ট্রাফিক ও হাইওয়ে বিভাগ সদস্যদের অসাধু কর্মকর্তার সংখ্যাও বেশি।

বাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের ট্রাফিক ইউনিটের টিআই, সার্জেন্ট, এটিএসআই ও কনস্টেবলরা চার বছর থেকে দশ বছর পর্যন্ত এসব এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদে এসব এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, ট্রাফিক পুলিশের টিআই নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামে সাড়ে চার বছর ধরে, টিআই সাখাওয়াত নোয়াখালীতে রয়েছেন আট বছর ধরে, টিআই সালাউদ্দিন বান্দরবানে রয়েছেন চার বছর ধরে, টিআই বিনয় বড়ুয়া কক্সাবাজারে রয়েছেন সাড়ে তিন বছর ধরে, ফেনীতে টিআই আলাউদ্দিন রয়েছেন সাড়ে তিন বছর ও ফেনীতে আরও এক টিআই মেহেদীও দায়িত্ব পালন করছেন তিন বছর ধরে। একই অবস্থা রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়ও।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ (পূর্ব)’র উপ-কমিশনার (ডিসি) সাহেদ আল মাসুদ জানান, সাধারণত একটি জোনে একজন টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) বা সার্জেন্টের সময়কাল দুই বছর। এটা সত্য যে একস্থানে দীর্ঘ সময় থাকলে শৃঙ্খলা রক্ষায় তার বিরুপ প্রভাব পড়ে। এজন্য প্রায়ই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বদলি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে যাদের বদলি করা হয়নি তাদেরও করা হবে বলে জানান তিনি।

একই ইউনিটে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করায় অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু পুলিশেরই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একই ইউনিটে দীর্ঘ দিন ধরে থাকায় সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন।

একইস্থানে দায়িত্ব পালন করার কারণে গাড়ির মালিক, চালকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে তাদের। এতে অনেকেই অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফিটনেসবিহীন ও অসম্পূর্ণ কাগজপত্রের গাড়ি চালাতে সহযোগিতা করেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতে নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নেও বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।

এসব বিষয়ে সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোনো সার্জেন্ট মামলা না দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে এবং তা নিয়ে অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমরা সার্জেন্টদের ক্যামেরা দেব। দায়িত্ব পালনকালে কোনো সার্জেন্টের ক্যামেরা বন্ধ থাকলে আমরা ধরে নেব অবৈধ কাজের উদ্দেশ্যেই তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর