আন্দ্রে রাসেলকে কীভাবে থামানো যায়?

২০১৯ আইপিএলের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আন্দ্রে রাসেলকে কীভাবে থামানো যায়? কাগিসো রাবাদার ইয়র্কারে যখন কলকাতা নাইড রাইডার্সের রাসেলের স্টাম্প উড়েছিল, তখন সবাই বিস্ময়াভিভূত আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। এ যেন ডেভিডের দৈত্যবধ! টি-টোয়েন্টিতে রাসেল দিন দিন সে উচ্চতায় উঠে যাচ্ছেন, যেটা গত কয়েক বছরে ওয়ানডেতে বিরাট কোহলির দখলে ছিল। তাহলে আইপিএলের কোনো দলের অধিনায়ক রাসেলকে আটকাতে চাইলে কোন পথে হাঁটবেন?

আইপিএলে এবার আন্দ্রে রাসেল রূপ নিয়েছেন মূর্তিমান আতঙ্কে। একদিন ১৯ বলে ৪৯ রান তুলছেন তো পরদিনই ৪৮ রান করছেন ১৭ বলে। ২৮ বলে ৬২ রানের ইনিংসও আছে তাঁর। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে বোলাররা এখন প্রচণ্ড দ্বিধায় ভোগেন। একদিকে প্রতিপক্ষের টপ অর্ডারকে ফেরানো জরুরি, আবার এক একজন ব্যাটসম্যানের বিদায় মানেই আন্দ্রে রাসেলকে উইকেটে ডেকে আনা! আর এ মৌসুমে যে ফর্মে আছেন রাসেল তাতে দলের বিপদই বেশি ডেকে আনা হচ্ছে! উইজডেন তাই একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে, কোন উপায়ে রাসেলকে আটকানো যাবে।

রাসেল সব সময়ই পাওয়ার হিটার ছিলেন। চার-ছক্কা মারার জন্য সব সময়ই বিখ্যাত ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার। তাঁর অভিষেকের পর ১০০০ বল খেলেছেন এমন কোনো ক্রিকেটারই তাঁর চেয়ে বেশি বল প্রতি বাউন্ডারি মারতে পারেননি। রাসেল ২৪.২৭ শতাংশ বলেই বাউন্ডারি হাঁকান! তবে গত এক বছরে সেটা আরও বেড়েছে। ২০১৮ সালের পর থেকে ওভারে ১০.৮৪ রান তোলেন রাসেল। আর ডেথ ওভারে সেটা বেড়ে হয় ১১.৬৮ রান। একই ম্যাচে অন্য খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৮.১৪ ও ৯.২০। অর্থাৎ একই ম্যাচে, একই উইকেটে একই বোলারদের মুখোমুখি হয়ে প্রতি ওভারে গড়ে ২ রান বেশি তোলেন রাসেল। ক্রিকেটের কুলীন প্রথাগত ছাঁচে রাসেলের ব্যাটিংয়ের ধরনকে ফেলা না-যাক, তাঁর গুরুত্ব স্বীকার সবাইকে করতে হবে।

রাসেলের ক্যারিয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। নিষেধাজ্ঞার আগে-পরে। ডোপিং–সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে গড়িমসি করায় ১২ মাস নিষিদ্ধ ছিলেন। ফেরার পর রাসেলের পারফরম্যান্সে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি বললে ভুল হবে, এই অলরাউন্ডারের ধার আরও বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞার আগে পেস বোলারদের বিপক্ষে রাসেলকে ভয়ংকর দেখাত। ১০.৮৬ হারে রান তুলতেন রাসেল, আর স্পিনে ৮.৬০। মজার ব্যাপার পেসারদের বিপক্ষে আউটও দ্রুত হতেন রাসেল। পেসারদের বিপক্ষে ১৪.৬ বলেই আউট হতেন রাসেল, আর স্পিনে ১৮.৫ বলে।

নিষেধাজ্ঞার পর চরিত্র বদলায়নি রাসেলের। বরং সেটা আরও বেশি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন রাসেল। এখন পেসারদের বিপক্ষে আরও ভয়ংকর হয়েছেন, রান তুলছেন ১১.৬১ হারে। স্পিনেও রান করার হার বেড়েছে, ৯.১৯। এখানেও একটি মজার বিষয় আছে, পেসারদের বিপক্ষে এখন আরও দ্রুত আউট হচ্ছেন, ১৩.৬ বলে। আগের চেয়ে ১ বল কম। কিন্তু এখন স্পিনারদের বলে আউটই হতে চাচ্ছেন না রাসেল। আগের ১৮.৫ বলকে নিয়ে গেছেন ২৮.৪-এ!

এটুকু দেখে একটি উপায় কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। রাসেলকে আউট করতে হলে পেস বোলিং করতে হবে। আটকাতে চাইলে স্পিন। ওদিকে পেস বোলারদের বিপক্ষেই ঝড়টা বেশি তুলছেন রাসেল। একজন অধিনায়ক যদি রাসেলকে আউট করার চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু আটকাতে চান, তবে শুধু স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করাতে হবে। অন্তত ইনিংসের শেষ দিকে। শেষ দুই ওভারে রাসেলের উইকেট পেতে রান দেওয়ার চেয়ে তাঁকে আটকানোর পরিকল্পনাই ভালো। আর ইদানীংকালের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের মতোই লেগ স্পিনারের বেরিয়ে যাওয়া বলে ঝামেলা হয় রাসেলের। লেগ স্পিনে ওভারপ্রতি ৮.৫৬ রান তোলেন রাসেল, আর অন্য সব বোলারের বিপক্ষে ১২.২৩ রান! সুতরাং রাসেলের বিপক্ষে এক বা একাধিক লেগ স্পিনার নিয়েই নামা উচিত।

তাহলে অধিনায়কের হাতে থাকা পেস বোলারদের কী হবে? উইজডেনের প্রতিবেদনে বেন জোনস সে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উইকেটের বিভিন্ন অংশ ও বলের লেংথের অবস্থান দেখিয়ে সেখানে দেখানো হয়েছে, অফসাইডের একদম বাইরের দিকে ইয়র্কার দিতে হবে, নয়তো একদম নিখুঁত লাইনে শর্ট বল করতে হবে। এর বাইরে লেংথ বল করা মানেই বাউন্ডারির প্রায় নিশ্চয়তা। এ ছাড়া অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে বল করলেও নিরাপদ থাকা যায়। কারণ, রাসেলের শট খেলার বৃত্তে বল না থাকলে লং অন বা মিড উইকেটে বল যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর কাগিসো রাবাদার মতো ভয়ংকর গতিতে নিখুঁত বল করতে পারা ফাস্ট বোলার থাকলেও অধিনায়কেরা কিছুটা নিরাপদ।

কিন্তু রাবাদার মতো ফাস্ট বোলার তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। তাই জোনস অধিনায়কদের স্পিনেই ভরসা রাখতে বলছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর