স্বামীর টাকা হাতিয়ে নিতে অপহরণ নিজ সন্তানকে

বাসী স্বামীর টাকা হাতিয়ে নিতে নিজ ছেলেকেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন মা ও খালা। অপহরণের ছয় ঘণ্টা পর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শিশু নিরব উদ্ধার হয়। এর পর মা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। গত মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়িতে।

অভিযুক্ত মা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানিয়েছে, উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রায় বাবার বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন সৌদি প্রবাসী কালাম শেখের স্ত্রী সাবিনা আক্তার। সাবিনার সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল স্বামীর। তাই স্বামীর ওপর প্রতিশোধ নিতে ও ব্যাংকের রক্ষিত টাকা হাতিয়ে নিতে পরিকল্পনা করে সাবিনা ও তার বোন মাকসুদা। এরপর নিজ ছেলেকেই অপহরণের নাটক সাজায়।

উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র নিরব। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার নিরবের খালা মাকসুদা কৌশলে বিদ্যালয় গিয়ে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে ছুটি নেয়। পরে মাকসুদা ভাগনে নিরবকে নিয়ে বিদ্যালয় থেকে চলে আসে শিবচরে। এরপর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাহেরচরে এলাকার শেফালি বেগমের বাড়িতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় নিরবকে দেখে রাখার চুক্তিতে রেখে যায় খালা। এরপর শুরু হয় মূল নাটক মঞ্চায়ন।

দুপুরে সাবিনা ও মাকসুদা এক হয়ে শিবচর বাজারের কৃষি ব্যাংকের সামনের লোকদের বলে তার ছেলে অপহরণ হয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। দুই বোন থানা রোডের বাবুবাড়ি এলাকায় গিয়ে আবারও কান্নাকাটি করতে থাকলে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন তাৎক্ষণিকভাবে উপপরির্দশক (এসআই) সুমন আইচকে ঘটনাস্থলে পাঠান।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই বোন বারবার তাদের এই ০১৭৮৮৯৯৩৮০৫ নম্বর থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশের নানান তৎপরতায় অভিযুক্ত নম্বরটির কোনো কললিস্ট পাওয়া যায়নি। আর সন্দেহের শুরু এখানেই।

পুলিশ আরও জানায়, দুপুরে শিবচর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির মা সাবিনা। এরপর রাতে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিবচর পৌরসভার বাহেরচরে শেফালির বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

শিশু নিরব পুলিশের কাছে জানায় তার খালাই তাকে স্কুল থেকে নিয়ে এখানে রেখে যায়। এরপর রাতেই শিশুটির মা সাবিনা আক্তার ও খালা মাকসুদাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

অপহৃত ছাত্র নিরব বলেন, ‘ক্লাশ থেকে আন্টি (মাকসুদা) ডাক্তার দেখানোর কথা বলে শিবচর নিয়ে আসে। আমাকে একটি বাসায় রেখে চলে যায়।’

খালা মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমার দুলাভাই বড় বোনকে খুব চাপে রাখে। সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। তাই তাকে শিক্ষা দিতে ও তার পাঁচ লাখ টাকা বোনকে দেওয়ার জন্য এই নাটক সাজানো হয়। সেই মোতাবেক নিরবকে আমিই স্কুল থেকে নিয়ে আসি। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে শেফালির কাছে রাখি। এরপর প্রথম চাচতো ভাইকে জানাই অপহরণের কথা।’

মা সাবিনা আক্তার বলেন, ‘স্বামী বিদেশ থাকলেও দুই ছেলে নিয়ে তেমন কোনো খরচ দিতে চাইতো না। অনেক রাগী সে। তাই তাকে শিক্ষা দিতে ও ব্যাংকে রক্ষিত টাকা ভাগিয়ে নিতে এ নাটক সাজিয়েছি। ছেলের তো কোনো ক্ষতি করিনি। ওর ভালোর জন্য ওই মহিলার সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও দিতে চেয়েছি। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে তা নিজেদের পুরোনো সিম বলে জানান সাবিনা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘অপহরণের এ ঘটনায় রহস্য উদঘাটনের পর বুধবার শিবচর থানায় মামলা হয়েছে।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর