মমতার মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়

কংগ্রেসের সাথে বিজেপির আঁতাত নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার অভিযোগ ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর মদদেই সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জি এবং কংগ্রেসের আরেক সাংসদ অধীর চৌধুরী আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করছেন।

বুধবার উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায় নির্বাচনী জনসভা থেকে এই অভিযোগ করেছেন মমতা ব্যানার্জি।

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে এবারও লড়াই করছেন অভিজিৎ। অন্যদিকে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দীর্ঘদিনের সাংসদ অধীর। এদিন ওই প্রসঙ্গ তুলেই তৃণমূল নেত্রী বলেন, একটা ভোটও বিজেপিকে দেবেন না। কংগ্রেসকেও একটা ভোট দেবেন না। এখানে কংগ্রেস, বিজেপির হাত ধরেছে। আপনারাই দেখুন বহরমপুরে কংগ্রেসের এক নেতা লড়াই করছেন।

আমি শুনলাম তিনি লড়ছেন আরএসএস-এর মদদে…জঙ্গিপুরেও প্রণব মুখার্জির পুত্র লড়াই করছে আরএসএস এর মদদে। এমনকি এখানেও (দার্জিলিং) কংগ্রেসের প্রার্থীকে (শঙ্কর মালাকার) আরএসএস মদদ দিচ্ছে। আপনারা কি আরএসএস-কে মদদ করতে চান।

প্রথমে আরএসএস হাফ প্যান্ট পরে প্যারেড করার কথা বলতো, আর এখন নোট বাতিলের পর পুরো লুঠ করেছে।
তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন হল বিজেপিকে বাংলা থেকে তাড়ানোর, মোদি বাবু যাতে আর কোন দিন প্রধানমন্ত্রী না হয় তা ঠিক করতেই এই নির্বাচন। তাই তৃণমূলকেই ভোট দেবেন কিন্তু চোর চৌকিদারকে ভোট দেবেন না, কংগ্রেস বা সিপিআইএম-কেও ভোট দেবেন না। কারণ কংগ্রেস বা সিপিআইএম ভোট পেলে বিজেপি শক্তিশালী হবে। আমরা চাই ৪২-এ ৪২।

কংগ্রেস-বিজেপির আঁতাত নিয়ে মমতার করা ওই অভিযোগের পর এদিন বিকালে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘিতে এক নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত হয়ে তৃণমূল নেত্রীকে তোপ দাগেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি জানান, মমতা দি বলছেন কংগ্রেস নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে না। কিন্তু রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেলেঙ্কারির ইস্যু প্রথম কারা সামনে এনেছিল? এই কংগ্রেস। ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’-চৌকিদারকে চোর কে বানিয়েছিল? আমরাই চৌকিদারের চেহারা বদলে দিয়েছি। চৌকিদার আজকাল ঠিকমতো ভাষণ দিতে পারছেন না। গত ৭০ বছরে কোন রাজ্যে কংগ্রেস দল কখনও বিজেপির সাথে জোট করেনি। কিন্তু মমতাই বিজেপির সাথে জোট করেছিল।

কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, মমতা ব্যানার্জি আরএসএস-এর ভিতরকার খবর জানে দেখে মনে হচ্ছে উনি নিজে ওই সংগঠনের কোর কমিটির সদস্য। তা না হলে এত খবর জানবে কি করে?

প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখার্জির প্রশ্ন, ওনারা জানছেন কি করে যে আমরা কথা বলেছি? উনি কি আমাদের টেলিফোন ট্র্যাপ করছেন না আমাদের পিছনে গোয়েন্দাগিরি করছেন। আমরা কখনও বিজেপির সাথে ঘর করিনি। বিজেপির বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হচ্ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মমতা তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, আরএসএস-এর কাজ কাউকে মদদ দেওয়া বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার নয়। আরএসএ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে, রাষ্ট্রহীতের কাজ করে। কিন্তু অভিজিৎ মুখার্জি, অধীর চৌধুরী-কংগ্রেসের এই দুই নেতার কেউই রাষ্ট্রহীতের কাজ করে না। তাই তাদের হয়ে তো আরএসএস কাজ করতেই পারে না।

পরিসংখ্যান বলছে ১৯৯৯ সালে বিজেপি-তৃণমূল জোট হয়। ওই বছর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ী সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ২০০১ সালে তহেলকা কাণ্ডের সময় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এর পর ২০০৩ সালে এনডিএ-তে ফেরেন মমতা। ২০০৬ সালে বাজপেয়ী সরকারের কয়লামন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাথে জোট বাঁধে তৃণমূল। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি-তৃণমূল জোট হয়। এরপর মমতা-বিজেপি সম্পর্কে ফের ফাটল ধরে।

অধীর চৌধুরী বলেন, মমতা এখনও পর্যন্ত বলেন নি যে, তিনি বিজেপির সাথে ঘর করে তিনি অন্যায় করেছিলেন। এটাও বলেননি যে নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন আগামী দিনে তিনি আর বিজেপির সাথে গাঁটছড়া বাঁধবেন না।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর