নুসরাতের মৃত্যু: সেদিন যা ঘটেছিল অধ্যক্ষের কক্ষে

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে মারা যান তিনি। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। লাইফ সাপোর্টও তেমন কাজ করছিল না। এরপর চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

নুসরাতের মৃত্যুর পর এখন প্রশ্ন উঠছে সে দিন অধ্যক্ষের কক্ষে আসলে কি ঘটেছিলো। আর এরই জবাব দিলো নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান। মৃত বোনের বরাত দিয়ে সে জানায়, গত ২৭ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তাঁর পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে নুসরাতকে অধ্যক্ষের রুমে ডেকে নেন। নুসরাত তখন আরো তিন-চারজন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে শুধু তাঁকে ঢুকতে দেন পিয়ন। এরপর দরজা আটকে অধ্যক্ষ বিভিন্ন প্রলোভন দেখান।

১ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে তাঁকে প্রশ্ন দেওয়া হবে, যদি তিনি অধ্যক্ষের কুপ্রস্তাবে রাজি হন। এরপর অধ্যক্ষ নুসরাতের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর নুসরাত দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান।

এরপর মাদ্রাসায় থাকা ছোট ভাই রায়হানকে খবর দেওয়া হলে সে বোনের কাছে যায়। এরপর অধ্যক্ষ তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। অসুস্থ থাকার কারণে অধ্যক্ষের কাছে এসেছিল ছুটির আবেদন করতে। এখানে এসে আবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সেখান থেকে নুসরাতকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে স্বজনদের জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন দেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্রছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এরপর নুসরাতের মা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় পরের দিন তাঁকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। আজ আদালত তাঁর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রায়হান আরো জানায়, ৬ এপ্রিল সকালে মাদ্রাসায় গেলে এক ছাত্রী তাঁর বোন নুসরাতকে বলে যে তাঁর বান্ধবী নিশাতকে কারা যেন ছাদে মারধর করছে। পরে নুসরাত মাদ্রাসার তৃতীয় তলার ছাদে গেলে সেখানে বোরকাপরা ও হাতে মোজা লাগানো চার ছাত্রী তাঁকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়।

বলে, মামলা তুলে না নিলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। এরপর নুসরাত মামলা তুলে নেওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টার বিচার দাবি করেন। পরে ওই চারজন তাঁর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর