সোয়া তিন বছরেও মেরামত হয়নি সড়ক

সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য সড়ক খুড়ে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরুর সোয়া তিন বছর পরও সড়কগুলো মেরামত করতে পারেননি খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

নগরীর প্রায় ছয় শত কিলোমিটার সড়কে অর্ধলক্ষাধিক ছোট-বড় গর্ত প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে ফেলছে নগরবাসীকে। গর্তগুলো এমনিতেই যানজটের সৃষ্টি করছে, তার উপর বৃষ্টি হলেই এক একটি গর্ত পরিনত হচ্ছে মরণ ফাঁদে।

তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি ওয়ার্ডের সড়ক মেরামত হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও ২৮ টি ওয়ার্ডের কাজ। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডের সড়ক মেরামত করা হবে।

খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নগরীতে বিভিন্ন সড়ক খুড়ে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এজন্য মহানগরীর ৬৪০ কিলোমিটার সড়কে ৫৮০ কিলোমিটার সড়কে খোড়াখুড়ি করা হয়েছে।

কিন্তু গত তিন বছরেও গর্তগুলো যথাযথভাবে ভরাট না করায় তা ক্রমেই বড় হয়ে যাচ্ছে। যানবাহন গুলো গর্ত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করায় প্রতিদিনই আহত হচ্ছেন পথচারীরা।

তাছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই নোংরা পানিতে ভরে যাচ্ছে গর্তগুলো। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও অনেক সড়কে হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এতে নগরবাসী চরম জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এই দুরবস্থা থেকে নগরবাসী কবে মুক্তি পাবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) সূত্রানুযায়ী, নগরীতে তালিকাভুক্ত ছোট বড় সড়ক রয়েছে এক হাজার ২১৫টি। সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৬৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আড়াই শতাধিক, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার।

এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক সড়ক রয়েছে। প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কে ওয়াসার পানির লাইনের পাইপ বসানোর জন্য খোড়া হয়। মাঝে মধ্যে ইট-খোয়া দিয়ে গর্তগুলো মেরামত করার চেষ্টা করা হলেও। তা ৩/৪ দিনের বেশী টেকশই হয়নি।

পাইপ স্থাপনের জন্য নগরীর শিবাবাড়ি মোড়, শের-এ-বাংলা রোড, শামসুর রহমান রোড, ফারাজীপাড়া, মজিদ সরণি, সামসুর রহমান রোড, হাজি মহসিন রোড, আহসান আহমেদ রোড, সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তা, মুজগুন্নী এলাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসের সামনের সড়ক, খালিশপুর হাউজিং এলাকা, নিরালা ও সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৯০ ভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াসার সূত্র জানায়, নগরীর অর্ধলক্ষাধিক বাড়িতে সুপেয় পানির সংযোগ দেয়ার জন্য খোড়া হয়েছে। এছাড়া পাইপলাইন স্থাপনের জন্য আরও অনেক সড়ক খোড়া হয়। প্রধান সড়কের অধিকাংশ মেরামত করা হলেও। ছোট ছোট সড়ক গুলোতে এখনও গর্তগুলো রয়ে গেছে। বর্তমানে পাইপের সংযোগস্থলে ভাল্ব সংযোজনের জন্য আরও আর একদফা খোড়া হয়েছে। যে গুলো ইট দিয়ে কোন রকমে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কেসিসির নির্বাহি প্রকৌশলী-২ মো: লিয়াকত আলী খান বলেন, নগরীতে সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে সম্প্রতি প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র। বৈঠকে দ্রুত সড়কগুলো মেরামতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গত ১ আগস্ট সড়কের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে (ডিও) চিঠি পাঠান মেয়র।

খুলনা ওয়াসা প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ একটি মেগা প্রকল্প। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য খোড়াখুড়ির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও নগরবাসীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কিছু অংশ (রয়্যাল মোড় হতে শিববাড়ি প্রায় ২ কিলোমিটার) সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে মেরামত করে দেয়া হয়েছে। কিছু সড়ক চলাচল উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলো মেরামত করা হয়েছে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক মেরামত করা হয়েছে। কাজ চলছে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডের সড়ক মেরাতম হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর