সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কাল

আগামীকাল বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের হাল এবার কে ধরছেন এমন কৌতুহল দলে তা রয়েছে বটেই জেলার অন্যান্য দল এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রয়েছে কৌতুহল। তবে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফিরফিরে মেজাজ চলাফেরা প্রমাণ করছে তারা আবারো বহাল থাকছেন স্ব-স্ব পদে।

এবার সভাপতি পদে নির্বাচন আগ্রহীরা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডা. আফম রহুল হক। বর্তমানে জেলা কমিটির জ্যোষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. আ ফ ম রহুল হক। ২০০৪ এর ২১ আগস্টে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহতদের দেশ ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি এবং ৭১ এর ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার সময় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসাবে আহতদের গোপনে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবী এবং নেতাদের গোপনে আশ্রয় দেন।

আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ১৯৯৬ ও ১৯৯১ এর সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর তিনি ছিলেন দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৫ পরবর্তী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় সেনা শাসকের নির্যাতনের মুখে ২২ মাস কারাভোগ করেন। ২০০২ সালে কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে হরতাল ডেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক আহবায়ক ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ সদস্য, যোগাযাগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান। এছাড়াও আলোচনায় উঠে এসেছে ১৯৭৪ এ সাতক্ষীরা কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি, সাতক্ষীরা সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র নাম। তবে এই চার নেতার কেউই প্রকাশ্য সভাপতি প্রার্থী হতে চান এমন দাবি করেননি। তারা বলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাইলেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের টানা পনের বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নজরল ইসলাম এবারও সাধারণ সম্পাদকের পদে আলোচিত হচ্ছেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ এর সংসদ নির্বাচন সাতক্ষীরা সদর আসনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন এবং ২০০৮ এর নির্বাচনে জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির অনুকূলে প্রার্থী তা প্রত্যাহার করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এখন পর্যন্ত দুই দফায় দলের জেলা সম্পাদক। ২০১৬ সালে তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অবশ্য কাউন্সিলদের কারও কারও দাবি তিনি এবার সভাপতি হবেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে আরও যারা নিজেদের নাম প্রকাশ করেছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। তিনি যশোর সিটি কলেজের ৭৪/৭৫ সংসদের ভিপি, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক, ৬৯ এ ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ৭৫ পরবর্তীতে দলের পক্ষে সাহসী ভূমিকা গ্রহণকালে নির্যাতনর শিকার, ২০১৩ সালে সাতক্ষীরায় জামায়াত বিএনপি’র সহিংস তান্ডবের বিরুদ্ধে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন । তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কয়েকবারের সভাপতি ও সাতক্ষীরার দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক। এ ছাড়া মাঠে আছেন সদর উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শেখ সাহিদ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা আ হ ম তারকউদ্দিন, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনার রশীদ।

এর আগে ১৯৭০ এ তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতির হাল ধরেছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সৈয়দ কামাল বখত সাকি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট এএফএম এন্তাজ আলি। ১৯৮০ সাল ফের সৈয়দ কামাল বখত সাকি সভাপতি হন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ। ২০০০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সৈয়দ কামাল বখত সাকি মৃত্যুবরণ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান। এরপর ২০০৪ সালের সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতি হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. নজরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুনসুর আহমদকে ফের সভাপতি ও মো. নজরল ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় কমিটি।
এবার প্রায় পাঁচ বছর পর এবার কে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাল ধরবেন তা জানা যাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

বার্তা বাজার/ডব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর