পাঁচ টাকা নিয়ে বের হয়ে, ৫ দিন পর লাশ হয়ে ফিরল শিশু

ঢাকার ধামরাইয়ে অপহরণের পাঁচ দিন পর আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভোররাতে শিশু মুবিনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধার করা হয়েছে তার মৃতদেহ।

এ ঘটনায় পুলিশ আজিজুল ইসলাম (৩০) নামের এক আসামিকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মুবিনের পাশের গ্রামের পরিত্যক্ত এক পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।

আটক আজিজুল ইসলামের (৩০) বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি ধামরাইয়ের মঙ্গলবাড়ি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

স্বীকারোক্তিতে আজিজুল জানান, শিশু মুবিনকে তিনজন মিলে হত্যা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ আদায়। কিন্তু পাঁচ বছরের শিশুটি কান্না করায় তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অপহরণের দিনই।

আজিজুল আরো জানায়, মুবিনকে তিনি বন্ধু বলে ডাকতেন, আর মুবিনও তাকে বন্ধু বলে ডাকতো। মুবিনকে গত শনিবার দুপুরে মোজো কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাতে থাকেন আজিজুল। এরই মধ্যে আজিজুলের মাথায় কুচিন্তা ভর করে মুক্তিপণ আদায়ের। পরে গ্রামের আরো দুজনকে সঙ্গী করেন তিনি।

শনিবার মুবিনদের টয়লেটের কাছে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এতে লেখা ছিল ‘মুবিনের কথা ২৪ ঘণ্টা স্মরণ রাখবে’। এছাড়া একটি মোবাইল নম্বরও লেখা ছিল তাতে। ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আজিজুলকে। পরে ডায়েরির পাতা থেকে ছেড়া চিরকুটের কাগজ মিল থাকায় সন্দেহ আরো প্রবল হয় পুলিশের।

মুবিনকে গত শনিবার সকালে নতুন জামা ও প্যান্ট কিনে দেন তার মা। ওই জামা-প্যান্ট পরেই মায়ের কাছ থেকে পাঁচ টাকা নিয়ে বাড়ির পাশের দোকানে যায় মোজো কিনতে। এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেনি সে। ওই দিন রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এদিকে, ওইরাতেই মুবিনদের টয়লেটের কাছে পাওয়া যায় একটি চিরকুট। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের মঙ্গলবাড়ি গ্রামে। অপহৃত শিশু প্রবাসী আবদুল করিমের ছেলে।

ওই ঘটনায় সোমবার রাতে মুবিনের মামা সোহেল মাহমুদ বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সোহেল মাহমুদ জানান, ছোট শিশুটি মায়ের কাছে ভাপা পিঠা খেতে চেয়েছিল ওইদিন। মা পিঠাও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পিঠা খাওয়ার ভাগ্য হয়নি তার।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আজিজুলের স্বীকারোক্তিতে উদ্ধার করা হয় মুবিনের লাশ। ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে মুবিনের লাশ। অন্য আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মা ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১২ বছর ধরে মঙ্গলবাড়ি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করে আসছেন আজিজুল। এ সুযোগে গ্রামের অনেকের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। মুবিনকে তিনি বন্ধু বলে ডাকতেন।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর