শুদ্ধি অভিযানে ধীরগতি, ফের সক্রিয় হচ্ছে সন্ত্রাসীরা

খুন থেকে শুরু করে যেকোনো অপরাধ সংঘটিত করতে সিদ্ধহস্ত পেশাদার সন্ত্রাসীরা। চলমান শুদ্ধি অভিযানের সময় কিছুটা কম সক্রিয় থাকলেও অভিযান থমকে যাওয়ায় ফের সক্রিয় হয়েছে নগরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ।

শীর্ষ পর্যায়ের অপরাধীরা আত্মগোপনে। কেউ কারাগারে কিংবা দেশের বাইরে। তবুও থেমে নেই তাদের ত্রাস, চাঁদাবাজি। অনুগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন অপরাধ সাম্রাজ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বহদ্দারহাট এলাকায় মঈন উদ্দিন প্রকাশ লম্বা মহিউদ্দিন অস্ত্র ব্যবসা, অপহরণ, জমি দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে খুনের মত ঘটনা ঘটায় মহিউদ্দিন ও তার অনুসারীরা। মহিউদ্দিন পুলিশের তালিকাভুক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী।

তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার অস্ত্র আইনে মামলা (নম্বর-৩১(৩)১১) এবং চন্দনাইশ থানায় অস্ত্র আইনে (নম্বর-১(৪)৯৮) মামলা রয়েছে। ২০০৬ সালের র‌্যাবের হাতে আটকও হন মহিউদ্দিন। একাধিকবার কারাগারেও যান।

ভয়ংকর সন্ত্রাসী এসরাল প্রকাশ আজরাইল বাহিনীর প্রধান নিয়ন্ত্রক মহিউদ্দিন। এছাড়া বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও এলাকায় চাকমা সুমন, ফ্রুট সোহেল, ভাগিনা ইমরান, হামকা জালাল, লম্বা দিদার, নেওয়াজ শরীফ, জাহেদ হোসেন উজ্জ্বল, কামরুল হাসান, বিধান ধর ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত বলে জানান ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।

মুরাদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অপরাধের নিয়ন্ত্রক ফিরোজ। ফিরোজের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি, ছিনতাই, অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা। স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায়ও গ্রেফতার হন ফিরোজ। ফিরোজ এইট মার্ডার মামলার প্রধান আসামী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ খানের অন্যতম সহযোগী বলে প্রচার রয়েছে।

এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার হাবিব খানের একটি গ্রুপ বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলেছে জানা গেছে। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার কফিল উদ্দিনের হাতে।

২০০৩ সালের দিকে কালুরঘাটে একটি প্রতিষ্ঠানের ৫৬ লাখ টাকা ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হন কফিল। সেসময় আসামীদের স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে, অস্ত্র কেনার জন্য টাকা লুটের ঘটনাটি।

এছাড়া ২০১১ সালে মুরাদপুরে পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল মান্নানের উপর হামলার ঘটনায় এজাহারনামীয় আসামী কফিল। এছাড়া আলোচিত ত্রিপল মার্ডার ও এইট মার্ডারের মাস্টারমাইন্ডও ছিল শিবির ক্যাডার কফিল।

কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের মত দুর্ধর্ষ অপরাধে জড়িত পেশাদার সন্ত্রাসী মোহাম্মদ আলমগীর। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর পরিবহন ব্যবসায়ী হারুন হত্যা মামলার (সদরঘাট থানার মামলা নম্বর-৫(১২)১৭) চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামী তিনি।

২০১৮ সালে পাঁচলাইশ থানাধীন এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে জেলা পরিষদ সদস্য আলমগীর চৌধুরীকে হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনা তদন্তে উঠে আসে নগরের কন্ট্রাক্ট কিলার আলমগীরের নাম।

চট্টগ্রাম নগরে মাদকের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল বরিশাল কলোনি। সিএমপির উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসেনের নেতৃত্বে সদরঘাট থানার তৎকালীন ওসি নেজাম উদ্দিন এ স্পট বন্ধ করে দেন। কিন্তু বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক ডাইল মান্নান এখনও সক্রিয় বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে সদরঘাট ও কোতোয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর র‍্যাবের হাতে দুইটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী নূর মোস্তফা টিনু। কারাগারে বসেও অনুগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে চকবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে টিনুর অপরাধ সাম্রাজ্যের হাল ধরেছে তার ভাই নুরুল আলম শিপু। নুরুল আলম শিপুর বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা।

চকবাজার এলাকায় টিনুর হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে সাদ্দাম হোসেন ইভান, স্টাফ কোয়ার্টারের কুদ্দুছ মিয়ার পুত্র রবিউল ইসলাম রাজু, কাপাসগোলা ইদ্রিস ভিলার লেদু মিয়ার পুত্র নুরুন্নবী প্রকাশ গার্মেন্টস নবী, চয়ন দাশ গুপ্তের পুত্র অভিক দাশ গুপ্ত, খগেন্দ্র দে’র পুত্র বিপ্লব দে প্রকাশ এলজি বিপ্লব, আবু তাহেরের পুত্র দালাল জাবেদ।

চকবাজার এলাকায় সমস্ত অপরাধের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ২ থেকে ১০টি পর্যন্ত মামলা আছে বিভিন্ন থানায়। নির্মাণাধীন ভবন, রেস্টুরেন্ট, গার্মেন্টস, গাড়ির স্ট্যান্ড, কোচিং সেন্টার, কাঁচাবাজার ও ফুটপাতে চাঁদাবাজিতে সক্রিয় তারা।

বাকলিয়া এলাকায় ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায় জড়িত পুরাতন চারতলার সঞ্জিত বৈদ্যর পুত্র অনিন্দ্য বৈদ্য সানি। সানির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যাসহ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় মামলা (নম্বর-২৫(৯)১২), চকবাজার থানার মামলা (নম্বর-৭(৫)১৭ ও ৫(৮)১৬) রয়েছে।

নগর জুড়ে ছিনতাই চক্রের নেপথ্যে আছে চান্দগাঁও বারাই পাড়া এলাকার কায়সার হামিদ। তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি থানাসহ একাধিক থানায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

চান্দগাঁও কসাই পাড়ার জয়নাল আবেদীন জুনুর পুত্র হামকা রাজু ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানার মামলা (নম্বর-৩৩(৪)১৭), পাঁচলাইশ থানার মামলা (নম্বর-১৭(২)১৮) সহ একাধিক মামলা রয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ রয়েছে তারা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। র‌্যাবের হাতে তারা গ্রেফতার হয়, আইনের ফাঁক ফোকরে কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা যাতে আইনের ফাঁক ফোকরে বের হয়ে ফের অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল।
-বাংলানিউজ

বার্তা বাজার/ডব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর