ফোন এলেই বুকের মধ্যে ধুকপুক করে এই ক্রিকেটারের

আইপিএলে কোনো ম্যাচ বা অনুশীলন শেষে ফোন খুলতে গেলেই পার্থিব প্যাটেলের মনের মধ্যে অনুভূতিটা দানা বেঁধে ওঠে। বুকের ধুকধুকানি বেড়ে যায়। অজানা আশঙ্কায় মনটা কেঁপে ওঠে।

না জানি কোনো খারাপ খবর আসে! মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তাঁর বাবা আহমেদাবাদের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এদিকে পার্থিবকে লড়তে হচ্ছে মাঠে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। মাঠের এই লড়াইয়ে হার-জিত ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো তেমন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু বাবার কিছু হলে…থাক, পার্থিব ওসব ভাবতেই চান না। তাঁর ভাবনা শুধু এটুকু, ‘শুধু প্রার্থনা করি চিকিৎসকদের কাছ থেকে কোনো খারাপ খবর যেন না আসে।’

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের বাবা অসুস্থ আইপিএল শুরুর আগে থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে পার্থিব টুইট করেই জানিয়েছিলেন খবরটি, ‘আমার বাবার জন্য প্রার্থনা করুন। তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় ভুগছেন।’ এরপর থেকেই তাঁর বাবা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। কখনো কোমায় যাচ্ছেন, কখনো কোমা থেকে ফিরছেন। এই অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দী থেকেই আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট খেলতে হচ্ছে ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে। খেলা শেষেই ছুটছেন আহমেদাবাদে বাবাকে দেখতে। তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি দল সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এমনও হয়েছে খেলা শেষেই আহমেদাবাদের বিমান ধরতে হয়েছে পার্থিবকে, আবার ফিরতে হয়েছে পরের দিনই।

বাবা যেদিন অসুস্থ হলেন, সেই দিনটা পার্থিবের পরিষ্কার মনে আছে। তারপর থেকে টানা ১২ দিন বাবার পাশে পড়ে ছিলেন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে। প্রথম ১০ দিন তো বাড়িমুখোও হননি। তখন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির বেশ কয়েকটি ম্যাচ ছেড়েছেন বাবার পাশে থাকতে। খেলাকে খেলার জায়গায় রেখে এখন পার্থিবের দিন শুরু হয় এভাবে—চিকিৎসকদের কাছে বাবার শরীরের খোঁজখবর নেওয়া, পরিবারের সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শ করা। তাঁর মা ও জীবনসঙ্গী যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পার্থিবের সঙ্গে আলাপ করে নেন। অর্থাৎ, বাবার অসুস্থতা এবং তা নিয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ক্রিকেট—এ সবকিছুতেই একসঙ্গে মনোযোগী থাকতে হচ্ছে ভারতের হয়ে ২৫ টেস্ট ও ৩৮ ওয়ানডে খেলা এই ক্রিকেটারকে।

জীবন তাঁকে এমন কঠিন পরীক্ষায় ফেললেও পার্থিব কিন্তু লড়াইয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে জানিয়েছেন এই কঠিন সময়ে নিজের লড়াই নিয়ে, ‘খেলার সময় কিছুই মাথায় থাকে না। কিন্তু খেলা শেষেই মনটা ছুটে যায় বাড়িতে। আমার দিন শুরু হয় বাবার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মা ও বউ বাসায় থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁরা আমার সঙ্গে আলাপ করেন। বাবার ভেন্টিলেটর কিছুদিন বন্ধ রাখব কি না, কিংবা অক্সিজেনই–বা কতটুকু দেব—এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন।’

বাবাকে সময় দিতে পার্থিব আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবার থেকে বলা হয় খেলা চালিয়ে যেতে। বাবার চাওয়া ছিল ছেলে ক্রিকেটার হবে। আইপিএল চলাকালীন তাই ঘরে বসে থাকবে কেন? পার্থিব তাই মনের মধ্যে তুষের আগুন নিয়ে মাঠের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত। এত চাপ নিয়েও একেবারে খারাপ করেননি। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ১২৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৭২ রান।

ম্যাচের দিন তাঁর পরিবার অনেক সময় পার্থিবকে কোনো কিছু না জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পাছে পার্থিব মানসিকভাবে চাপে পড়ে যান, এই ভাবনা থেকেই এমন করে থাকে তাঁর পরিবার। শুরুতে বিষয়টি তাঁর কাছে খারাপ লাগলেও পরে বুঝতে পেরেছেন ‘যে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত’ তাঁর ‘পরিবার’। পার্থিব নিজেও প্রস্তুত। শুধু ফোনটা এলেই তাঁর বুকের মধ্যে কেমন যেন ধুকপুক করে ওঠে!

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর