শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবারই প্রথম ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। তাই এবারে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। শুরুতে কোথাও কোনো ধরনের গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম মেশিন আছে ১ হাজার ৯২০টি। এবার রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট স্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৫টি এবং অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র থাকছে ৩টি। আর ভোটগ্রহণ কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৩টি। তবে মাত্র ৭টি ভোটকেন্দ্র বাদে ১৪৮টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ না থাকা কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলছে নির্বাচন কমিশন।

রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, মোট ১৫৫টি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই ১৪৮টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এসব সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন ভোট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। কোথাও কোনো প্রকার অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো কেন্দ্রে কেউ গোলযোগ সৃষ্টি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স থাকছে মোট ৩০টি এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি। ৬টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ও র‌্যাবের ১৬টি টিম এবং ৭ প্লাটুন বিজিবি শহরে মোতায়েন থাকবে ভোটের পরদিন (২২ জুন) পর্যন্ত। এছাড়া রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন বিচারিক হাকিম ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকেই মহানগরীতে টহল শুরু করেছে র‍্যাব ও বিজিবি। এই নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ হাজার ৮০০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

র‍্যাব-৫ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধপরিকর। এজন্য ২১ জুন ভোর ৬টা থেকে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মাঠে আছে র‍্যাবের ৩০০ সদস্য। স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট হিসেবে তারা ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি আরও জানান, র‍্যাব-৫ এর ১৫টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং পেট্রোল, স্ট্রাইকিং ফোর্স কমান্ডারসহ ১০টি জিপ, দুইটি স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ টিম প্রস্তুত আছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দল, সুপার মোবাইল মোটরসাইকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স টিম নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করবে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সদর দপ্তরে থাকা র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্স হেলিকপ্টারসহ প্রস্তুত আছে।

এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি তদারকির জন্য নির্বাচন সেল ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। শহরে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় প্রবেশমুখে সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। ২২ জুন পর্যন্ত র‍্যাবের এসব কার্যক্রম বলবৎ থাকবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, রাসিক নির্বাচনে এবার মেয়র পদে চারজন, সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১১ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশনের চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙল), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) ও জাকের পার্টি মনোনীত লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল)। যদিও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এরই মধ্যে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট ঘোষণা করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ইভিএম এর তালিকায় প্রতীকসহ এই প্রার্থীর নাম থাকবে।

এছাড়া রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে এবার ১৫৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ১১১ জন। মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম নামের এক প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের ১০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মোট ৪৬ জন নারী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে রাজশাহী মহানগরীর ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) সদস্য সুলতানা আহমেদ সাগরিকাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল হোসেন জানান, রাজশাহী সিটিতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার সংখ্যা ছয়জন। এবারে নতুন ভোটার আছেন ৩১ হাজার ২২৩ জন। তারা প্রথমবারের মতো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

উল্লেখ্য, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পথ চলা শুরু হয়। ১৮৭৬ সালের ১ এপ্রিল ভুবন মোহন পার্কের অভ্যন্তরে টিন সেডের দুইটি কক্ষে রাজশাহী পৌরসভা (রামপুর-বোয়ালিয়া মিউনিসিপ্যালিটি) কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় মিউনিসিপ্যাল এলাকার আয়তন ছিল ৬ দশমিক ৬৪ বর্গ মাইল। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার এর আয়তন ও জনসংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে রাজশাহী মহানগর এলাকার আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গ মাইল।

আর মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী সীমানা পুনঃনির্ধারণ হলে রাজশাহী মহানগরের আয়তন হবে ২৭২ বর্গ মাইল। ১৯৯৪ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের ২১ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠতম নির্বাচন।

বার্তাবাজার/এম আই