সাতক্ষীরা নগরের ৯৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত নয়। এসব পরিবারের মাসিক আয়ের প্রায় ১৬ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে বিদ্যুৎ ও রান্নার জ্বালানি ক্রয়ে। পরিবার প্রতি মাসে গড়ে এই খরচ প্রায় ২ হাজার ৩৭২ টাকা। এর মধ্যে গড় বিদ্যুৎ খরচ ১ হাজার ১৪৪ টাকা। আর রান্নার জ্বালানি বাবদ ব্যয় ১২২৭ টাকা।

সোমবার (২৫ মার্চ) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আয়োজিত ‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালানির বর্তমান ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত সাতক্ষীরা শহর’ শীর্ষক এক সংলাপে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সংলাপে সাতক্ষীরার নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালানি ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান সাগর।

‘বারসিক’ সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর রাজশাহী এবং জেলা শহর সাতক্ষীরার নগর দরিদ্রদের জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ বিষয়ক এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রাপ্যতা অনুযায়ী নানা ধরনের জ্বালানি উপকরণ ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে সাতক্ষীরার নগর দরিদ্রদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ পরিবার রান্নার কাজে কাঠের ব্যবহার করে। ৫৮ শতাংশ পরিবার গাছের পাতা, ৪০ শতাংশ পরিবার গ্যাস সিলিন্ডার, ৩২ শতাংশ পরিবার প্লাস্টিক/পলিথিন ব্যবহার করছে। বিগত দুই বছরে নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে। রান্নার কাঠ থেকেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। রান্নার ধোঁয়ার কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে ২৬ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের গুরুতর কাশির সমস্যা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় গবেষণার তথ্য সংগ্রহকালে ৯৪ শতাংশ উত্তরদাতা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন বলে জানিয়েছেন। মাত্র ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা এই শব্দটি শুনেছেন এবং এ সম্পর্কে ধারণা রাখেন। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের নগর দরিদ্র পরিবারের প্রায় ৩ শতাংশ পরিবার সোলার প্যানেল ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন।

সংলাপে বলা হয়, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ পরিচ্ছন্ন রান্নার চুলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু নগরের দরিদ্র মানুষের এ সম্পর্কে ধারণাই নেই বললেই চলে। নগরের দরিদ্র মানুষকে বাদ দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নবায়নযোগ্য শক্তি/জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং এবিষয়ক নীতিসমূহ অন্তর্ভুক্তিমূলক করার মাধ্যমে নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, জ্বালানি ব্যয় হ্রাস এবং পরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে।

নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যথাযথ তথ্য এবং ধারণার ঘাটতি রয়েছে। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এসম্পর্কিত সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচার-প্রচারণার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নগর দরিদ্র এলাকাগুলোতে স্থানীয়ভাবে চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামর্থ্য এবং চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ প্রণয়ন করে তা সরকারি ও বেসরকারিভাবে ভর্তুকিসহ স্বল্পমূল্যে বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

সংলাপে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলালের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। আলোচনায় অংশ নেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন-উর-রশিদ, পরিবেশ কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাতক্ষীরা পৌর কাউন্সিলর মারুফ হোসেন ও অনিমা রানী, নাগরিক নেতা আলী নুর খান বাবুল, বাংলাদেশ জাসদের নেতা ইদ্রিস আলী, সুজন সভাপতি অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, সনাক-সাতক্ষীরার সহসভাপতি আব্দুস সামাদ, সাংস্কৃতিক কর্মী শেখ সিদ্দিকুর রহমান, বদ্দীপুর কলোনীর বাসিন্দা সালমা খাতুন, যুব সংগঠক মুশফিকুর রহিম প্রমুখ।শফিকুর রহিম প্রমুখ।