আমলাভাঙা খালের দু’পাশে দুই গ্রাম। দক্ষিণপাশে দক্ষিণ কাজির হাওলা, আর উত্তরপাশে পশ্চিম নেতা গ্রাম। এই দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম ছিল একটি বাঁশের সাঁকো। নড়বড়ে সেই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হতো। সাঁকো পার হতে গিয়ে স্কুল পড়ুয়া শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধদের খালে পড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনাও ঘটতো প্রায়ই।

অবশেষে সেই দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওই দুই গ্রামের মানুষের পারাপারের জন্য একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে নির্মিত সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেসময় থেকেই সেতু দিয়ে লোকজন চলাচল শুরু হয়।

তাদের মধ্যে বই-খাতা নিয়ে সেতু পার হচ্ছিলেন পশ্চিম নেতা গ্রামের আব্দুল্লাহ। সে রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে আমি একবার পা পিচলে খালে পড়ে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে তিন কিলোমিটার ঘুরে কলেজে যেতাম। এখন এই সেতু হওয়ায় মাত্র ১৫ মিনিটে কলেজে যেতে পারবো। আমাদের কষ্ট দূর হয়েছে। আশা করি এখানে একটি পাকা সেতু হবে। তাহলে স্থায়ীভাবে আমাদের কষ্ট দূর হবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে ৪ ফুট প্রস্থের কাঠের এ সেতুটি আকর্ষণীয় করতে লাল-সাদা রঙে সাজানো হয়েছে। সেতুর মাঝপ্রান্তে একটি টং দোকান স্থাপন করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু দেখতে আসা দর্শনার্থী আল আমিন বলেন, ‘পথচারী কিংবা দর্শনার্থীরা এখানে চা-কফি, চিপস্-চানাচুর ও বিস্কিট খেতে পারবেন। খালের মাঝখানের টং দোকানে বসে এক কাপ চা-কফি খাওয়া সত্যিই উপভোগের। এই দোকানটির কারণে অনেক মানুষ এই সেতুটি দেখতে আসবে।’

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদের উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৫ জন শ্রমিক ২৩ দিন ধরে সেতুটির নির্মাণকাজ করেন। এতে ব্যয় হয় মোট ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার সরকারি এবং ৮৭ হাজার টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিলের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দু’পাড়ের অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এখানে। সেটি বিবেচনায় এখানে কাঠের অবকাঠামোর সেতু করে দেওয়া হয়েছে। কংক্রিটের সেতু যাতে করে দেওয়া যায়-আমরা সে ব্যবস্থা করবো।’

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি খাল দুইটি গ্রামকে বিভক্ত করে রেখেছে দীর্ঘদিন। দু’পাড়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীসহ দুইটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের জন্য সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা দৃষ্টিনন্দন একটি কাঠের সেতুটি করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটির মাধ্যমে পশ্চিম নেতা গ্রামের ইব্রাহিম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বিনামূল্যে সেতুর মাঝখানের টং দোকানটি তাকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।’