২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) শুরু হচ্ছে আজ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এই মেলা আয়োজিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেলা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আহসানুল ইসলাম (টিটু)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বহুমুখী করার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো আমাদের মূল লক্ষ্য।

পণ্যে বহুমুখীকরণ করতে পারলে আমাদের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের মেলার মূল উদ্দেশ্য গার্মেন্টস খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বহুমুখী করা। এখানে আন্তর্জাতিক স্টল থেকে দেশীয় স্টলগুলো যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য করতে পারে, রপ্তানি করতে পারে—এটাই আমাদের প্রধান ফোকাস।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রচুর ইলেকট্রনিকস পণ্য মেলায় অংশ নিয়েছে।

এই খাত অনেক এগিয়ে গেছে। আগামী দিনে আমরা চেষ্টা করব আমাদের লোকাল যে শিল্পগুলো আছে—হস্তশিল্প, ফার্নিচার ও হিমায়িত খাদ্যপণ্যকে ফোকাস করা হবে। এ ছাড়া চামড়া, পাটশিল্পকে গার্মেন্টসের মতো বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী, সেটার একটি প্রতিফলন আপনারা মেলায় দেখতে পারবেন।’

আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য মেট্রো রেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ফার্মগেট থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তরা থেকে যারা মেলায় আসবে, তারা মেট্রো রেলে এসে ফার্মগেট থেকে বাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা মেলায় চলে আসতে পারেন, সেই সুবিধা রাখা হয়েছে।

গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত বেশি দর্শনার্থী আসবে তত বেশি লোকাল শিল্প উৎসাহিত হবে। মিডিয়ার জন্য আলাদা মিডিয়া সেন্টার করা হয়েছে।’

এই মেলাকে কতটা আন্তর্জাতিক মেলা বলতে পারি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলার চেষ্টা করছি এ জন্য যে আমাদের লোকাল শিল্পগুলো যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে যাওয়ার একটা সুযোগ পায়। এখানে শুধু প্রদর্শনী হয় যে আমাদের কী কী আন্তর্জাতিক মানের পণ্য রয়েছে। আমরা বেশি উৎসাহিত করে আনছি না এ কারণে যে বিদেশিরা এক মাসের মেলায় আসতে চায় না। আমাদের লক্ষ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ। আর পণ্যগুলো বিদেশিদের দেখানোই উদ্দেশ্য।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার মেলায় তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৬ থেকে ১৮টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এ ছাড়া একটি হেল্পডেস্ক ও অভিযোগ বুথ করে দেওয়া হবে। আরেকটি বিষয়, আগামী দিনে মেলায় কোনো ম্যানুফেকচারার বঞ্চিত হবে না। তাদের দেওয়ার পরও আমরা কমার্শিয়াল স্টল বরাদ্দ দেব। মেলা আয়োজন করতে হলে সব কিছুর একটি সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘গত দুই বছর রাস্তার কিছুটা সমস্যা ছিল। এবার রাস্তা অনেক ভালো, ফলে অনেক দর্শনার্থী আসবে বলে আশা করছি। আমরা চেষ্টা করছি একটি ভালো মেলা অনুষ্ঠানের জন্য। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি মেলার আয়োজন করলেও এবার নির্বাচনের কারণে কিছুটা পিছিয়েছে। এই মেলাটি মানুষের জন্য বার্ষিক একটা ঐতিহ্যবাহী মেলায় পরিণত হচ্ছে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, ‘মেলাকে কেন্দ্র করে সিকিউরিটির ইস্যু থাকে। সে জন্য আমরা ৫০ জনের আউটসোর্সিং করে নিরাপত্তার জন্য লোকবল নিয়োগ দিয়েছি। এ ছাড়া পুলিশ-আনসার থাকবে। প্রয়োজনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব কাজ করবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ১০০ জন ক্লিনার নিয়োগ করা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বাস থাকবে। এবার ফার্মগেট থেকেও বাসে ওঠা যাবে। ফলে খুব অল্প সময় মেলাকেন্দ্রে আসা যাবে।’

বার্তা বাজার/জে আই