এমপি নির্বাচিত হবার জন্য সন্ত্রাসীদের সাথে নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না জানালেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শেষে উঠান বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, বিরুলিয়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নির্বাচনী প্রচার করেন ট্রাক প্রতীকের এই প্রার্থী। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই গণসংযোগ রাত আটটা পর্যন্ত চলে।

উঠান বৈঠকে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সাথে যারা ঘুরে তারা সবাই এই সমাজের আলোকিত মানুষ। একজন সন্ত্রাসীও আমার সাথে পাবেন না। সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমি রাজনীতি করবো না। আর আমি নির্বাচিত হবার পর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে এটাও আমি কোনোভাবেই বরদাশত করবো না। তাই এমপি নির্বাচিত হওয়ার স্বার্থে কোনো সন্ত্রাসীকে আমার সাথে নেই নাই। অনেকে বলেন, সন্ত্রাসীরও তো ভোট আছে, কিন্তু তাদের ভোটের আমার দরকার নাই। নির্বাচিত হতে পারলে হবো, না হতে পারলে হবো না; কিন্তু এর জন্য নীতি, নৈতিকতা এবং ধর্ম-বর্ণ বিসর্জন দিয়ে এমপি হতেই হবে এমনটা আমি মনে করি না।’

বিরুলিয়ার ১নং ওয়ার্ডের ৯টি মৌজার বিএস রেকর্ড সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ হতে দেন নাই এলাকাবাসীর এই কথার প্রেক্ষিতে সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এমপি নির্বাচিত হলে এই ৯টি মৌজার বিএস রেকর্ড নিজে দাঁড়িয়ে করে দেবেন। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীকে একটি টাকাও খরচ করতে হবে না।

এসময় প্রভাবশালীদের দ্বারা একটি খালের প্রবাহ রুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে এমন বিষয় তার সামনে উপস্থাপন হলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই খালটি যদি আরএস রেকর্ডীয় হয় এবং তার উপরে যদি একটি ২০ তলা বিল্ডিং ও থাকে, নির্বাচিত হলে সেটাও আমি গুড়িয়ে দিয়ে খালের প্রবাহ সচল রাখবো।’

এসময় বিরুলিয়ার ১নং ওয়ার্ডে একটি কবরস্থান নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছি না, তাই যে কেউ আমার কাছে এসে তাদের যেকোনো সমস্যার কথা আমাকে বলতে পারবেন। আপনারা আগের সংসদ সদস্যকে দেখেছেন, বর্তমান সংসদ সদস্যকে দেখছেন, আগামীতে নতুন একজনকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি একজন ভদ্রলোক, বেহায়াপনা করার মতো মানুষ না। আমি কাউকে একটা কথা তিনবার বলি না। দ্বিতীয় বারে কাজ নাহলে তৃতীয়বার একজন মানুষকে অনুরোধ করলে তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে হলেও মন রক্ষা করেন। এই কথাটি এজন্য বললাম, আমার সাথে ২/৩ মাস ধরে যারা নির্বাচনের কাজ করছেন, সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ তাদেরকে প্রচন্ড ডিসটার্ব করতেছে। বার বার ফোন করে, বাড়িতে লোক পাঠায়, হাতে-পায়ে ধরায়। এমপি হবার জন্য এতটা বেহায়াপনা করতে হবে? এতটা নিচে নামতে হবে? আমি তো জীবনেও এতটা নিচে নামবো না।’

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি কাউকে জোর করে কি আমার নির্বাচন করাবো? নিজে নির্বাচিত হবার জন্য আমি আরেকজনের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে উপরে উঠতে চাই না। এটা আমার বৈশিষ্ট্য না। সাভারের মানুষ যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তবে তারা আমাকে নির্বাচিত করবে। আর আমার ভালো কাজ এবং বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নে গেলেই যে কেউ দেখতে পাবেন।’

নির্বাচিত হলে সাভার ও আশুলিয়ায় ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করবেন উল্লেখ করে সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি খারাপ মানুষের জন্য খুবই খারাপ এবং কঠোর।

নির্বাচনী পল্টিবাজদের চরিত্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগের দিন নৌকার প্রার্থীর থেকে টাকা নিয়ে পরের দিন পল্টি মেরে ঈগল পাখি মার্কায় অনেকে চলে গেছে। এধরণের মানুষকে আপনারা কি বলবেন? আমি তো অন্য প্রার্থীর কাউকে আমার নির্বাচন করার জন্য ডাকি না।’

বিরুলিয়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত এই গণসংযোগ কালে এসময় ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ইমতিয়াজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য আশুলিতা থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক মুন্সী প্রমুখসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা বাজার/জে আই