বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারার প্রবন্ধের প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে কতগুলো লক্ষণ স্পষ্ট। বিপুলসংখ্যক লেখাই দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট, নিরস, কুহকী এবং অলংকারবর্জিত অসুন্দর গদ্যে তৈরি। কারও কারও গদ্যরীতিটি আক্রমণাত্মক। এর ফলে গদ্য হয়ে পড়েছে সৌন্দর্যহীন, কর্কশ এবং স্থূল।

দু-একজনের গদ্যরীতি মিষ্টি কথায় আক্রান্ত বা পাণ্ডিত্যের ভারে গম্ভীর থাকায় পাঠকের জন্য পঠন-পাঠনে দূরতিক্রম্য। এমন বহু রচনাই পাওয়া যায়, সে সবের রচয়িতাদের উদ্দেশ্যে মহৎ। কিন্তু নিজেদের অভ্যাস হেতু রচনা হয়ে ওঠে উদাসীন গদ্য বা ক্লান্ত গদ্যের রূপ। বিষয় ভাবনা অপূর্ব হওয়া সত্ত্বেও বহু রচনার গদ্যের রূপরীতি কুয়াশাচ্ছন্ন ভাববাদ প্রচারের গদ্যরীতিতে আক্রান্ত। এর ফল দাঁড়ায় এই যে, পাঠক শ্রেণি বুঝতে পারেন না প্রবন্ধকার কী বলতে চাচ্ছেন।

বামপন্থি রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়েও ব্যক্তিবাদের অহংবোধ আক্রান্ত গদ্যরীতির প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে পাঠককে লেখক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। রাজনীতি তথা প্রগতিবাদের কথা বলতে গিয়ে চাতুর্যপূর্ণ বাকভঙ্গি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে কেউ কেউ তরুণ পাঠক শ্রেণিকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। এই যে চারপাশে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সেসব অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গেই অতিক্রম করতে পেরেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

আমার পক্ষে তার সম্পর্কে লেখা অনেকটা দুঃসাধ্য। কেননা তার সাহিত্য চিন্তা, সমাজচিন্তা এমনকি ব্যক্তিগত প্রবন্ধ থেকেও রাজনীতিকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। ভাষা যে জীবনবিচ্ছিন্ন নয়, রাজনীতি নিরপেক্ষ নয়, তা টের পাওয়া যায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ পাঠ করলে। আর এই যে রাজনীতির জীবন কথক, তার গদ্যরীতিটিও একেবারেই আলাদা এবং নিজস্ব। কথাসাহিত্যের ভুবনে তার বিচরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেই অথবা দীর্ঘদিনের গদ্যচর্চার ফলে নিজের জন্য আলাদা একটি গদ্যের ভুবন বা রূপরীতি তিনি আবিষ্কার করে নিয়েছেন গদ্যটি তার পরিপাটি বলেই জটিলতামুক্ত। জটিল শব্দ চয়ন বা বাক্য বন্ধন তার স্বভাবে নেই।

ইংরেজি সাহিত্যের মেধাবী অধ্যাপক হিসাবে তার গদ্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের আশঙ্কা ছিল কিন্তু তা ঘটেনি। এমনকি প্রচলিত তৎসম শব্দের বহুল ব্যবহার এবং সংস্কৃত প্রত্যয় বা ধাতুজাত শব্দও তিনি যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। ব্যাকরণের শব্দতত্ত্ব ও রূপতত্ত্ব সম্পর্কে তার সচেতনতা অবাক করার বিষয়। কেননা তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন না।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানেন তার লেখালেখির উদ্দেশ্য পাঠকের স্নায়ুতে মাদক রস কিংবা আমোদ-প্রমোদ রস প্রবেশ করানো নয়, পাঠকের চিন্তার অনুশীলন দ্বারা সামাজিক সত্যের সামনে দাঁড় করানো। আমার মনে হয় সামাজিক সেই সত্যকে জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই তিনি সাহিত্য জীবনের শুরুতে কথাসাহিত্যের নির্মাণ কাজে হাত দিয়েও সরে আসেন প্রবন্ধ সাহিত্যে। কারণ, তার চোখের সামনে তখন পঞ্চাশের আর ষাটের দশক।

এ দেশের মানুষের মুক্তি প্রত্যাশা প্রকাশের পরিপক্ব কাল। এমনি কালে তৃণমূল মানুষ ও নতুন তৈরি হতে থাকা দুর্বল মধ্যবিত্তের জন্য রাজনীতির সঠিক পথের আবশ্যকতাই ছিল জরুরি, কবিতা কিংবা গল্পের চেয়ে। আর সেই পথটা হলো সমাজব্যাখ্যা। সেই উদ্দেশ্য থেকেই বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিভ, পরিশীলিত রুচি এবং ধারালো যুক্তিকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার শিল্প নির্মাণের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেন।

একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠক যদি তার রচনা পাঠ করেন তবেই লেখকের শিল্প কৌশলটি ধরতে পারবেন। ‘তাজউদ্দীন আহমদের অবস্থান’, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক ভূমিকা’, ‘শেখ মুজিবের অঙ্গীকার’, ‘বিদ্যাসাগরের কাজ’ ‘আমার পিতার মুখ’ ইত্যাদি প্রবন্ধ তার দৃষ্টান্ত।

যে কোনো লেখাই (প্রবন্ধ) যখন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখতে বসেন তখন তার গদ্য রূপটি হয়ে ওঠে একের ভেতর বহুর রূপ। কখনো গল্পের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় কিংবা কখনো কবিতার শব্দ ও ছন্দের অনিবার্য বিন্যাসে সমাজের স্বপ্ন ও আগামী কল্পনার রূপকে নিজের করে নিয়ে তিনি পাঠকের সামনে তুলে ধরেন।

তার রচনায় ‘উত্তম পুরুষ’ রীতিতে বলা গদ্য এবং ‘সর্বজ্ঞ লেখকের দৃষ্টিকোণ’ থেকে বলা গদ্যগুলো পাঠ করলে বোঝা যায়, গদ্যরীতিটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের জন্যই উপযুক্ত। তাই মনোযোগী এবং কৌতূহলী পাঠক ভুলে যান তিনি গদ্য কবিতা নাকি গল্প নয়তো প্রবন্ধ পাঠ করছেন। প্রবন্ধের গঠনরীতিটি যে মন্ময় বা তন্ময় উপবিভাগ রয়েছে, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গদ্যের ভেতর তা মিলেমিশে একাকার হয়ে সম্পূর্ণ আলাদা রীতিতে পরিণত হয়। সেই গদ্যরীতিটিই তার নিজস্ব কণ্ঠস্বর। তার এ গদ্যশৈলীর পেছনে কাজ করে নিজস্ব গভীর শ্রেণিজ্ঞান বা শ্রেণি চেতনা। সেই জ্ঞানে ঋদ্ধ বলেই তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে আসা পাঠক শ্রেণি এবং সাধারণ মানুষের বোধ বা অনুভবের ভাষাকে বুঝতে পারেন। ঠিক এমন জনগণের অনুভবের ভাষাকে বুঝতে পারতেন দুই বিপরীত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সে কারণেই ‘কুমু’কে বুঝতে পারতেন, তার ভাষাকেও বুঝতে পারতেন এবং নির্দেশ করতে সক্ষম হয়েছেন, কোথায় কুমুর বন্ধন। মোটকথা শ্রেণিটা যত সত্য, ঠিক ততটাই জরুরি সেই শ্রেণি বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত গদ্যরীতি।

এক শ্রেণির পাঠক আছেন যারা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রাজনৈতিক দর্শনে অনাগ্রহী কিন্তু তার গদ্যের মুগ্ধ পাঠক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অধ্যাপক অমলেন্দু দের মন্তব্য হচ্ছে, ‘দ্যাখো, মি. চৌধুরীর গদ্য বলার ঢংটি কিন্তু চমৎকার। রাজনীতির শুকনো কথাগুলোকে তিনি কি করে যেনো খাঁটি শিল্প বানিয়ে ফেলেন। আজকাল অমনটা কলকাতায়ও খুব একটা দেখা যায় না।’

ওই শিল্পের সঙ্গেই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বোঝাপড়া। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মার্কসীয় রাজনৈতিক সাহিত্যের সঙ্গে পাঠকের গভীর সম্পর্ক গড়ে না ওঠা কিংবা ক্রমাগত দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অন্য বহু কারণের সঙ্গে শিল্প না হয়ে ওঠা গদ্যও অনেকটা দায়ী।

পার্টি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তত্ত্বীয় সাহিত্যগুলোর পাতা উলটালে তা সহজেই অনুমান করা চলে। সেসব নিরস গদ্য তরুণ কর্মীর হৃদয়ে পাঠাভ্যাসের প্রেরণা জোগায় না। আর একটি বিষয় পাঠক মাত্রই কৌতূহল প্রকাশ করবেন। সেটি হচ্ছে শাসক-শোষক শ্রেণির প্রতিনিধিদের শিল্পচর্চা। বাংলাদেশের বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা সুখপাঠ্য উল্লেখ করার মতো কোনো বই-পুস্তক অতীতেও লিখতে পারেননি, বর্তমানেও নয়। বুর্জোয়া বা পুঁজিবাদী বিশ্বের দিকে তাকালে অবাক হতে হয় যে, সেসব দেশ মেধাবী, রুচিশীল, সংস্কৃতিবান, পরিশ্রমী বুদ্ধিজীবী জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে যারা স্বশ্রেণির স্বার্থে উচ্চাঙ্গের রাজনৈতিক পুস্তক লিখেছেন এবং লিখছেন। শাসনের উচ্চাসনে বসেও এ কাজটি তারা অনেকেই পরিশ্রমের সঙ্গে করেছেন। অন্যদিকে আমাদের মেধাশূন্য, অর্ধশিক্ষিত, অসংস্কৃত শাসক-শোষক শ্রেণি শিল্পচর্চার এ শূন্যতা পূর্ণ করছে পেশিশক্তির চর্চার দ্বারা। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সাহিত্যচর্চার বিষয়টি ঐতিহ্য হিসাবে গড়ে ওঠেনি। এ বিষয়ে তারা অমনোযোগী।

এই শিল্পচর্চার বিষয়টিতে অন্য অনেকের সঙ্গে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রয়েছে পার্থক্য। তিনি প্রতিনিয়ত যে চর্চা করেন তার প্রমাণ তার ক্রমবিকাশমান গদ্যশৈলী। কেবল কবিতা বা গল্পের ক্ষেত্রেই নয়, প্রবন্ধের ক্ষেত্রেও অভিধানের মৃত শব্দের শিলাস্তূপ থেকে শব্দ বাছাই করে নিয়ে একজন সৃষ্টিশীল প্রবন্ধকারকেও গদ্যদেহে প্রাণ সঞ্চার করতে হয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চলমান রাজনীতির বহুমুখী সত্যকে নিছক জ্ঞানের বিষয় না করে ভাবের সঙ্গে বিষয় মিশিয়ে রস সৃষ্টিতে সক্ষম। তার প্রবন্ধের গদ্যশৈলী কবিতার মতো অলংকার বহুল।

চিন্তার সঙ্গে যুক্তি এবং সূক্ষ্ম অনুভবের সঙ্গে যুক্ত করে কৌতুক। ‘দুই বাঙালির লাহোর যাত্রা’ প্রবন্ধে পাকিস্তান প্রস্তাবের বিষয়টি লেখক এভাবে বর্ণনা করছেন, ‘হক সাহেবের প্রস্তাবটি তার নিজের ছিল না। ধারণা নয়, ভাষাও নয়, সবই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর। মঞ্চে ওঠার আগে প্রস্তাবটি হক সাহেব দেখেনওনি, তিনি তৈরি প্রস্তাব পড়ে দিয়েছিলেন শুধু। বলা তাই সম্ভব যে তিনি এটি উপস্থাপন করেননি, তাকে দিয়ে উত্থাপন করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কণ্ঠ তার স্বর অন্যের।’ (নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ : পৃ. ৪৪)। এই গদ্য পাঠক চিত্তে যেমনি কৌতূহল সৃষ্টি করে তেমনি করে কৌতুক।

অন্যদিকে ‘কণ্ঠ এবং স্বর‘ শব্দ দুটি গভীর ব্যঞ্জনা কবিতার মতো হয়ে ওঠে। লেখক গদ্যের শরীরের চিত্রকল্পের আবহ নির্মাণ করে কাব্যের কৌতুক রস পরিবেশনের ভেতর দিয়ে তীব্র শ্লেষ সৃষ্টিতেও দক্ষ। যেমন-‘মুসলমান সমাজে মাকড়সার জাল বোনা অনেকটাই চলল; শাস্ত্র নিয়ে তর্ক হলো। পুঁথি সাহিত্যের চর্চা হলো। কিন্তু বুর্জোয়া বিকাশের উদার আলো তেমন দেখা গেল না।’ (বেকনের মৌমাছিরা : নির্বাচিত প্রবন্ধ : পৃ. ১৬২)।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যখন দূর বা নিকট অতীতের ইতিহাসের কথা লেখেন তখন তিনি নিছক তথ্য সন্ধানী ঐতিহাসিক ব্যক্তি হয়ে ওঠেন না। নিরাসক্তভাবে সমাজের চালচিত্রও রূপায়ণ করেন না। নিষ্পাপ দর্শকের মতো কেবল চোখ ভরে দেখেই যান না। ক্ষুধাতুরের মতো শুধু ইতিহাসের আস্বাদ গ্রহণ করেন না। তিনি ঘটনা বা তার কার্যকারণের ওপর আলোকসম্পাৎ করে পাঠককে নিজের বোধের অংশীদার করে নেন। যেমন-ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের কথা তিনি এভাবে বাণীবন্ধন করেন, ‘আমি উৎপাটিত নই, আমি বেড়ে উঠবো বৃক্ষের মতো, শেকড় প্রোথিত থাকবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভূমিতে, আকাঙ্ক্ষা ছিল এটাও।’ (বায়ান্নর আন্দোলন : নিঃরাজনৈতিক পৃ. ৪১)। গদ্যের এ বাণীভঙ্গিটি আবেগাত্মক অথচ প্রত্যয় দৃঢ় বাণীর মিশ্রণে তৈরি হয়েছে।

পাঠকের স্বপ্ন ও উত্তেজনা সত্তার সঙ্গে একাকার হয়ে যায় এই কারণে যে, বিষয়বস্তুর সঙ্গে লেখকের ব্যক্তিত্বও মিশে একাকার হয়ে গেছে। রচনার সঙ্গে লেখক ব্যক্তিত্বের মেলবন্ধনের বিষয়টি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিটি প্রবন্ধে ছড়িয়ে আছে। ‘লেনিন কেন জরুরি’ প্রবন্ধে তাকে পাওয়া যায় কী অসীম বিশ্বাসে দৃঢ়। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় লেখক চিত্তে ক্ষোভ-দুঃখ সৃষ্টি হয় কিন্তু আপন বিশ্বাসকে, ব্যক্তিত্বকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেন না তিনি।

তিনি লিখলেন, ‘যতদিন পৃথিবীতে শোষণ থাকবে ততদিন তিনি থাকবেন। মূর্তি ভাঙলেও তিনি অমর হয়ে রইবেন।…পৃথিবী যদি শোষণশূন্য হয় কখনো, লেনিন তখনো থাকবেন। তখন থাকবেন ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে।’ (নির্বাচিত প্রবন্ধ: পৃ. ২৭৬)। বাক্যটিতে বা অনুচ্ছেদটিতে কোথাও আবেগের উচ্ছ্বাস নেই, নাটকীয় বাণীবিন্যাসও নেই, রোমান্টিক অলীক স্বপ্নও নেই। আছে বিশ্ববাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে দূরদর্শী মানুষের চূড়ান্ত ব্যক্তিত্বের হিসাব। এ ব্যক্তিত্বই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে দাঁড় করিয়ে দেয় তার শিল্প মানসে। তাই তার গদ্য হয়ে ওঠে জনগণের শিল্প সম্পত্তি।

রচনার স্টাইল রচয়িতার মানস ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেই ব্যক্তিত্বের কারণেই রচনা হয়ে ওঠে ব্যাকরণ শুদ্ধ, ভাষায় গভীর, বুদ্ধিতে সূক্ষ্ম, চিন্তায় পরিচ্ছন্ন, প্রকাশভঙ্গিতে স্নিগ্ধ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রাজনৈতিক ধারার গদ্যের ভাষাটি তার অর্জিত ব্যক্তিত্বেরই প্রতিফলন। সেই ব্যক্তিত্বের কারণেই তিনি তার গদ্যের নির্মাণ ক্ষেত্রে কারিগরি বিদ্যাটি অর্জন করেছেন। তাই তিনি রাষ্ট্র আর সমাজকে নিজস্ব যে কৌশলে পর্যবেক্ষণ করেন, পাঠককেও দেখার আর বুঝার সেই ভঙ্গিটি শিখিয়ে দেন।

বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধকারদের মতো তিনি অর্জিত পাণ্ডিত্য, মেধা, জ্ঞান নিয়ে জনগণের শ্রদ্ধা আর ভক্তির পাত্র সেজে আত্মজ্ঞানের প্রচারক হয়ে নিজেকে অসামান্য করে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারেন না।

অন্যদিকে ভাবনিষ্ঠ প্রবন্ধকারদের মতো লঘুকল্পনা আর হাস্যরসের রসিকজনও সাজেন না। উভয়ের সংমিশ্রণে তিনি হয়ে ওঠেন আপন ব্যক্তিত্বের ভেতর দিয়ে সৃষ্টিশীল গদ্যের রূপকার। পাঠকের একেবারে চেনা মানুষ। আপন মানুষ। বুর্জোয়া নন, উদারবাদী বুর্জোয়া নন; সামাজিক ন্যায় ও ঔচিত্যবোধের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অতি কাছের মানুষ।

২৩ জুন প্রিয় এ ব্যক্তিত্বের ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে তথাকথিত দেশভাগের হতভাগ্য শিকার আমি ভিনদেশের নাগরিক হয়েও স্বদেশ ভুবনের পিছুটান এড়ানো সম্ভব হয়নি। হয়তো হবেও না আমৃত্যু। শ্রদ্ধেয় স্যারকে জন্মদিনে জানাই অফুরান শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।