এখনো পুরোপুরি ভাবেই আসতে শুরু করেনি শীতকালীন সবজি ফুলকপি। আগাম জাতের কিছু ফুলকপি বাজারে আসতে শুরু করলেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্খিত দাম। আর কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় চরম হতাশা আর দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন চাষীরা। এমনটাই জানান আগাম ফুলকপি চাষি কয়েকজন।

চাষিরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলকপির বাজার দর যেন ডুবে গেছে। প্রতিকেজিতে কমেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিনই দাম কমতে থাকায় লাভ তো দুরের কথা কাঙ্ক্ষিত মূল্যও পাচ্ছিনা আমরা। এতে ক্রেতা খুশি হলেও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই কমছে সবজির দাম। এক্ষেত্রে খেত থেকে পাইকাররা সস্তায় সবজি কিনে বেশী দামে বিক্রি করলেও উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের ঘরে। অতি কষ্টে উৎপাদন করা এসব সবজির দাম কৃষকরা ভোগ করতে না পারলেও কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে তিন গুণ দামে।

মৌসুমের শুরুর দিকে ফুলকপির বাজারে চড়া দাম থাকলেও এখন তা ২০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকদের খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কৃষকরা জানান বৈরী আবহাওয়ায় আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে বিপাকে পড়েছেন তারা । রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচ এবার দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নেই আগাম জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মগড় ও কাশিপুর এলাকায় বেশি চাষ হয়েছে। গেল বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর অধিক পরিমাণে ফুলকপি চাষ হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

ফুলকপি ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, ঢাকা শহরে বর্তমানে ফুলকপির চাহিদা না থাকায় দাম কমে গেছে। গত কয়েকদিনে যে গাড়িগুলো পাঠিয়েছিলাম তাতে আমরা পুঁজি হারিয়েছি। যার ফলে এখন আগের দামে ফুলকপি কিনতে ভয় পাচ্ছি।

ধর্মগড় মন্ডলপাড়া এলাকার কৃষক মুনজুর হোসেন জানান, তারা কষ্টে উৎপাদিত কাঁচা শাক-সবজির মূল্য পাচ্ছেন না। বরং তাদের কাছ থেকে কিনে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ভালো লাভ করছেন। আর এই ফুলকপি শহরে বা আশপাশের হাট-বাজারে প্রায় দ্বিগুণমূল্যে খুচরা বিক্রি চলছে। দুই তিন দিন আগেও আমরা ৮০ টাকা কেজিতে ফুলকপি বিক্রি করেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখন বলছেন প্রতি কেজি ২০ টাকার কমে।

কাশিপুর এলাকার কৃষক মকবুল ইসলাম জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। প্রথম দিকে ভালো দাম পেলেও এখন মজুরি খরচও উঠছে না। কপি এখন ২০ কেজিতেও বিক্রি হচ্ছেনা ।

খরচের তুলনায় পানির দরে ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তো দূরে থাক, মাঠ থেকে তুলে হাটে নিয়ে আসল খরচও উঠছে না।

রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় এবার আগাম ফুলকপি প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। হঠাৎ ফুলকপির দাম কমায় চাষিরা লোকসানে এমন প্রশ্নে’ তিনি বলেন, বাজারের বিষয়টা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেখেনা, এটি দেখেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আমাদের কাজ হল উৎপাদন বাড়ানো ও রোগবালাই পোকামাকড় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।

বার্তাবাজার/এম আই